গল্প: হতভাগা পর্ব: ২ লেখক : গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ

গল্প: হতভাগা

পর্ব: ২
লেখক : গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ


💫

দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে তানহা একটানা কাঁদছে। ঘরের ভেতরের চিৎকার, থাপ্পড়ের শব্দ, নাদিয়ার কান্না—সব মিলে চারদিক যেন ভারী হয়ে উঠেছে। অথচ মাত্র এক ঘণ্টা আগেও এই বাড়ির পরিবেশ স্বাভাবিক ছিল।

রায়হান তখনও কিছুই জানে না। ফোনের ওপাশে মা হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছে, কিন্তু স্পষ্ট কিছু বলছে না।

— "মা, কিছু বলো! এমন কী হয়েছে? তোমার গলাটা শুনেই তো আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম।"
রায়হানের কণ্ঠ ভেঙে পড়ছে।

অবশেষে কাঁদতে কাঁদতে শাহিনুর বেগম বলে ওঠে,
— "তোর বউ, রায়হান... সে মা হতে চলেছে। কিন্তু তুই তো তিন বছর ধরে বিদেশে! তাহলে বল, এই পেটের সন্তান কার?"

ফোনের ওপাশে এক মুহূর্তের নিস্তব্ধতা। তারপর শুধু একটা গভীর নিশ্বাস।

— "তুমি নিশ্চিত তো মা?"
— "রুবিনা দেখেছে। জানালা দিয়ে এক লোক ঢুকেছে নাদিয়ার ঘরে। আমি তো ভাবতেও পারিনি এমন হবে। আমি তো ওকে মেয়ের মতো দেখেছি। কিন্তু দেখ, কীভাবে বিশ্বাস ভেঙে দিলো!"

রায়হান কিছুক্ষণের জন্য চুপ। তারপর শান্ত গলায় বলে,
— "মা, তুমি একটু শান্ত হও। আমি আগামী সপ্তাহেই ফিরছি। আমি নিজে এসে সব বুঝে নেব। এখন নাদিয়াকে কিছু করো না।"

শাহিনুর বেগম ফোন নামিয়ে রাখে। কিন্তু মনের মধ্যে আগুন ধিকিধিকি করে জ্বলছে।


সন্ধ্যা নামে। তানহা চুপচাপ নাদিয়ার পাশে বসে। নাদিয়ার চোখ ফোলা, মুখ ফ্যাকাসে। কপাল ফাটা। ঠোঁটে রক্তের দাগ।

তানহা বলল,
— "ভাবি, তুমি সত্যিটা বলো। তুমি তো আমার বড় বোনের মতো। আমি জানি, তুমি এমন কিছু করতেই পারো না। কিন্তু যদি কিছু লুকিয়ে রাখো, তাহলে সেটা আরও খারাপ হবে।"

নাদিয়া চুপ। দুই চোখের কোণ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। ধীরে ধীরে বলে ওঠে,
— "তুই কি বিশ্বাস করিস তানহা, আমি কোনো পাপ করিনি?"

তানহা মাথা নাড়ে।
— "হ্যাঁ, আমি বিশ্বাস করি।"

— "তাহলে শোন... সেই রাতে খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। মা তখন পাশের বাড়িতে গিয়েছিলেন। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। তখন দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ পাই। আমি ভাবলাম মা ফিরেছেন। দরজা খুলতেই দেখি রায়হানের মতো দেখতে একজন লোক দাঁড়িয়ে। আমি কিছু বোঝার আগেই সে জোর করে ঘরে ঢুকে পড়ে।"

তানহার চোখ ছানাবড়া।
— "মানে?"

— "হ্যাঁ। আমি চিৎকার করেছিলাম, কিন্তু কেউ শুনতে পায়নি। পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। বাইরে বৃষ্টি, ভেতরে আমি একা... সে আমার মুখ চেপে ধরেছিল। আমি নিজেকে বাঁচাতে পারিনি। পরদিন জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি ঘরের এক কোণে পড়ে আছি। আমার শরীর কাঁপছিল। মা কিছু জিজ্ঞেস করেছিল, কিন্তু আমি কিছু বলতে পারিনি। কারণ আমি জানতাম কেউ বিশ্বাস করবে না।"

তানহা স্তব্ধ হয়ে যায়।
— "তাহলে তুমি ধর্ষণের শিকার হয়েছো?"

নাদিয়া চোখ বন্ধ করে মাথা নাড়ে।
— "হ্যাঁ।"

— "তুমি থানায় যাওনি কেন?"

— "আমি সাহস পাইনি তানহা। তুমি তো জানো আমাদের সমাজ কেমন। সবাই বলবে আমি নিজের ইজ্জত নষ্ট করেছি। মা বিশ্বাস করত না। রায়হান হয়তো বলত, আমি ওকে ঠকিয়েছি। তাই চুপ করে গেছি।"

তানহা বলল,
— "কিন্তু ভাবি, চুপ থাকলে তো অপরাধী আরও সাহস পাবে! তুমি এইটা কাউকে বলোনি কেন?"

— "আমি তোকে বললাম আজ। কারণ তোকে আমার নিজের বোন মনে হয়।"

এই সময় দরজার বাইরে কিছু মানুষের কথাবার্তা শোনা যায়।

— "নাদিয়া নাকি বেইমানি করেছে!"
— "কী মেয়ে রে বাবা! এমন সুন্দরী, ভদ্র—সব নাটক ছিল বুঝি?"
— "মহিলাদের চরিত্র বোঝা মুশকিল।"

এই সব কথায় তানহা দাঁতে দাঁত চেপে রাগ সামলায়। বাইরে গিয়ে বলে,
— "আপনারা যদি নিজেদের পরিবার নিয়ে এমন কথা শুনতেন, ভালো লাগতো? দয়া করে গুজব ছড়াবেন না। সত্যি না জেনে কাউকে দোষারোপ করা অন্যায়।"

এক বৃদ্ধা বললেন,
— "তুই তো পিচ্চি, আমাদের শিখাতে এসেছিস?"

তানহা কাঁপা গলায় বলে,
— "না, আমি শুধু বলছি, একটু মানবতা দেখান। কেউ অন্যায় করলে বিচার হোক, কিন্তু গুজব ছড়িয়ে কারো জীবন নষ্ট করবেন না।"


এক সপ্তাহ পর।

রায়হান ফিরে এসেছে। মুখে চিন্তার ছাপ, চোখে গভীর বিষাদ। সে ঢুকেই দেখে মা কাঁদছেন, আর নাদিয়া এক কোণে বসে।

— "নাদিয়া, আমাকে সব বলো। সত্যিটা।"

নাদিয়া নিচু গলায় বলে,
— "আমি তোর উপর কোনোদিন বিশ্বাসঘাতকতা করিনি, রায়হান। যেটা হয়েছে, সেটা আমার ইচ্ছায় হয়নি। আমি নির্যাতনের শিকার।"

— "তুমি পুলিশে কেন যাওনি?"

— "আমি ভয় পেয়েছিলাম।"

রায়হান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
— "তুমি কি জানো, আমি এই তিন বছরে কতটা কষ্ট করেছি শুধু তোমার জন্য? মা প্রতিদিন কাঁদে, আমি তোমার কথা ভেবে রাত জেগে কাজ করেছি। আর ফিরে এসে এ খবর শুনলাম?"

— "তুমি চাইলে আমি চলে যাবো।"

— "না। তুমি কোথাও যাবে না। বরং আমরা থানায় যাবো। তোমার মেডিকেল করাতে হবে। তোমার কথা প্রমাণ করতে হবে। তোমার সম্মান ফিরিয়ে আনতে হবে।"

শাহিনুর বেগম এবার অবাক হয়ে যায়।
— "তুই এই মেয়েটার পক্ষে কথা বলছিস রায়হান?"

— "মা, আপনি তাকে গালি দিয়েছেন, মারধর করেছেন, অথচ একবারও তার কথা শোনেননি! আপনি কি জানেন, সে ধর্ষণের শিকার হয়েছে?"

শাহিনুর বেগম থমকে যান। এক মুহূর্তের জন্য যেন হাওয়া বন্ধ হয়ে আসে।

রায়হান ধীরে ধীরে মায়ের হাত ধরে বলে,
— "আপনি কি চাইতেন না, আমি দেশে ফিরে এসে সত্যিটা নিজে জেনে নেই? আপনি না হয় মায়ের মতো, কিন্তু বিচার না জেনে আপনি যদি অন্যায় করেন, তাহলে তো আপনি-ই অপরাধী হয়ে যান।"

শাহিনুর বেগম চোখে জল নিয়ে বলেন,
— "আমার ভুল হয়েছে রায়হান। আমি মেয়েটার মুখে সত্যিটা শোনার সুযোগও দিইনি।"

রায়হান নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে বলেন,
— "তোমাকে আমি ছেড়ে যাবো না। তুমি সাহস করেছো আজ সত্যি বলার। এখন সাহস করে বিচার পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে।"



ঘটনাটা থানায় গড়ায়। তদন্ত শুরু হয়। নাদিয়ার বর্ণনার ভিত্তিতে স্কেচ তৈরি হয় সেই অপরাধীর। এলাকায় খোঁজ শুরু হয়।

রুবিনা একদিন থানায় গিয়ে বলে,
— "আমি যাকে জানালার কাছে দেখেছিলাম, সে এলাকায় নতুন এসেছিল। কিছুদিন কাজ করেছে, তারপর হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। আমি এখন তার মুখ চিনতে পারবো।"

শেষপর্যন্ত অপরাধী ধরা পড়ে। DNA রিপোর্টেও প্রমাণ মেলে—বাচ্চার পিতা সেই অপরাধী।

নাদিয়ার চোখে জল, কিন্তু এবার সেটা লজ্জা বা দুঃখের নয়—বরং বিজয়ের, মুক্তির।


চলবে…
পর্ব: ২
গল্প: হতভাগা
লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ


💝হতভাগা গল্পটি সম্পন্ন pdf নিতে চান তাহলে এ নাম্বার 01897682335 হোয়াটসঅ্যাপ বা ইমু করুন নাহলে পেইজে ইনবক্স করুন।

⭕শত্য প্রযোজ্য।


💝 প্রিয় পাঠক, আপনার জন্য একটি ক্ষুদ্র অনুরোধ!


আপনি যখন আমার গল্পটি পড়ছেন, তখন শুধু একটি গল্পই নয়—আমার স্বপ্নকেও সমর্থন করছেন। গল্পের শেষে থাকা **মাত্র ৫ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপনটি** ক্লিক করলে আমার সামান্য আয় হয়। ফেসবুক বা ওয়েবসাইট সরাসরি আয় দেয় না, কিন্তু **আপনার একটি ক্লিক** আমাকে নিয়মিত গল্প লিখতে অনুপ্রাণিত করে!  


এই ছোট্ট সহযোগিতাটুকুই আমার জন্য বিশাল। আপনার ভালোবাসা আর সমর্থন পেলে আমি আরও মন দিয়ে গল্প লিখতে পারব। ❤️  


**🔗 বিজ্ঞাপন লিঙ্ক:** 👇

https//wwwaddsadstaraadda.com


**#আপনার_এক_ক্লিক_আমার_অনুপ্রেরণা**  



✨ **ধন্যবাদ** আমার গল্পের পাশে থাকার জন্য!  





৩য় পর্ব লিংক👇

 https//mgugoloplikestorehotobagapartth


0 Post a Comment:

Post a Comment