গালকাটা_কবরস্থান ( পর্ব-০২)

 গল্প-গালকাটা_কবরস্থান ( পর্ব-০২)

11111

লেখক- রিয়াজ_রাজ

------------------------

কিছু বুঝে উঠার আগেই কেও তাদের পিছন থেকে ধীর কন্ঠে বলল" আমি যাবো মামা,কিন্তু ভাড়া একটু বাড়াইয়া দিতে হইবো"। রিয়াজ আর নিলয় চমকে উঠে পিছনে তাকায়। দেখে একটা বৃদ্ধ লোক চাদর গায়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার চেহারা কুৎসিত কালো। এবং একটা চোখ পুরো সাদা।


(বিঃদ্র- কোনো কপিবাজ গল্পটা শেষ হবার আগে কপি করবেন না। যদি করেন,তবে আপনার আইডি/পেজে অনেক রিপোর্ট যাবে।)


লোকটার দিকে অদ্ভুত চাহনিতে তাকিয়ে থাকে দুজনেই। এইটা মানুষ নাকি ভূত। লোকটা আবার বলল," স্যার ভয় পাইবার কারণ নাই। আমি ছোডো বেলায় একটা একচিডেন হইয়া চোখে আঘাত লাগাইছি৷ তাই এইরহম দেহায়"। উনার কথা শুনে নিলয় মুখের ভিতর ফিসফিস করে বলতে লাগলো," ভাষাকে পুরো গনহত্যা করে দিলো"। 


যাইহোক, ওরা লোকটার গাড়ির সামনে যায় অবশেষে। ব্যাগ গাড়ির পিছনে রেখে দুজনেই উঠে বসে। ড্রাইভার সাহেব গাড়ি চালু দেওয়ার আগে একটা গান চালিয়ে দেয়। সাউন্ড বক্স উনার গাড়িতেই ফিট করা। কিন্তু কষ্টের বিষয় হচ্ছে,গানটা রিয়াজ আর নিলয় হজম করতে পারছেনা। সেই ১৯৬৮ সালের একটা পুরনো গান। গানের সাউন্ড কোয়ালিটি শুনে ওদের বিষ হজম করার শাস্তি অনুভব হচ্ছে। এদিকে ড্রাইভার গাড়ি চালু দিয়ে টান দিলো। রিয়াজ আর নিলয় কানে হেডফোন গুজে দিয়ে কুচু কুচু কুচু গান লাগিয়ে দেয়৷ অন্তত গাড়ির গানটা শুনা যাচ্ছেনা। 


রাত গভীর হয়ে যাচ্ছে। এখন প্রায় রাত ১১ঃ৫৩ মিনিট।  শনশান একটা নিরিবিলি পথে গাড়িটা গন্তব্যে পৌঁছাতে থাকে। অথচ গন্তব্য আজও কারো জানা নেই। ওদের টার্গেট হচ্ছে গালকাটা কবরস্থান এলাকায় নেমে একটা হোটেল খোজে নিবে।কিন্তু হোটেল কি তারা আসলেই পাবে? দেখাযাক সামনে কি হয়। রিয়াজ নিলয় হেডফোনে গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ে।ওদের কিছুই মনে নেই। হুট করে ড্রাইভারের ডাকে তারা লাফিয়ে উঠলো," স্যার,আইসা পড়ছি৷ আপনেরা নাইমা যান"।  রিয়াজ নিলয় ঘাবড়ে লাফিয়ে উঠে ঠিকিই,কিন্তু উঠার পর তারা আরো বেশি ঘাবড়ে যায়৷ 

222222

ওদের গাড়ি একটা নদীর পাশে দাড় করানো। গাড়িও কোনো রাস্তায় নয়। একটা বিলের ( মাঠ) উপর। রিয়াজ ড্রাইভারকে বলল," আপনি কোথায় নিয়ে এলেন আমাদের। নদীর পাড়ে এনে বলছেন এলাকা এসেছে? "। ড্রাইভার কিছুটা মুচকি হেসে বলল," স্যার,এইখান থেইকা নদী পার কেমনে হমু। আপনারা একখান নৌকা নিয়া নদী পার হইতে হইবো। অন্য কোনো রাস্তা নাই। এই নদীর ওপাড়ে হচ্ছে গালকাটা কবরস্থান এলাকা। আমি ওহন কি করমু কন। আপনারা কি আগে থেইকা জানতেন না যে নদী পার হইতে হইবো? "। রিয়াজ নিলয়ের দিকে তাকিয়ে একটু চোখ রাঙ্গায়। নিলয় তাল হারিয়ে মাথা অন্য দিকে ঘুরায়। এরপর রিয়াজ ব্যাগ বের করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে৷ নিলয়ও রিয়াজের পিছনে বের হয়। রিয়াজ ড্রাইভারকে টাকা দেওয়ার আগে বলল," আচ্ছা?  আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে পারি?"। ড্রাইভার কিছুক্ষণ রিয়াজের দিকে তাকিয়ে থাকে। এরপর বলল," জ্বী কি জিগাইবেন জিগান"। রিয়াজ কিছুটা খুশি হয়ে ব্যাগ থেকে একটা খাতা আর কলম বের করে। এরপর লোকটাকে জিজ্ঞেস করে," স্টেশনে এই এলাকার নাম শুনে সবাই ভয় পাচ্ছিলো কেন? আর আপনিও বা কেন আসলেন। অন্যদের মত ভয় কেনো পাননি?"। রিয়াজের কথা শুনে ড্রাইভার একটু আন ইজি ফীল করে। কেনো তা অজানা। কিন্তু পরবর্তীতে তার বয়ানে ক্লিয়ার হয়ে গেলো সব। ড্রাইভার একটা স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে জবাব দিতে থাকে,

- আমি একচিডেন করিনাই স্যার। আমার বারিও ওই গেরামে। একদিন আমি রাস্তায় গাড়ি চালাইতেছিলাম। হটাৎ কইরা দেখি মাঝ রাস্তায় আমার গাড়িডা নষ্ট হইয়া গেছে। আমি বুঝিনাই কি হইলো। তাই গাড়ি থেইকা নাইমা পেছনের ইঞ্জিন চেক করতাছিলাম। তহন আমার লগে যেডা হইছে,তা আমি কোনোদিন ভুলতে পারুম না। 

- কি হয়েছিলো সেদিন?

- আমি গাড়ি থেইকা নামার পর ইঞ্জিন চেক করতেছিলাম। তহন মনে হইলো আমার পেছনে কেও দাড়াই রইছে। ডর লাগতেছিলো আমার। ডরে ডরে আমি পেছনে তাকাই দেখি লম্বা কিছু এক্ষাণ জিনিস আমার মুখ চাইপা ধরছে। ওইডা বহুত লম্বা কিছু আছিলো। আমার মুখ ওর হাত দিয়া এমন ভাবে চাইপা ধরছে, আমি আর কিছু দেখতাছিলাম না। পরে হেয় আমারে গাড়ির লগে চাপাই ধরছে। আর তহন আমি হের চেহারা দেখছিলাম। কি ভয়ংকর। আমি মুখে কইয়া বুঝাইতে পারুম না। তারপর ওইডা আমার চোখে একটা আঙ্গুলের নখ ঢুকাই দিছিলো। 

- বলেন কি। এরপর..?

- পরে আমি বেহুশ হইতে আছিলাম আস্তে আস্তে। কিন্তু বেহুশ হইবার আগে আমি দেখছিলাম হেয় আমার চোখ খুইলা খাইতেছিলো। আমার খালি একটা চোখ খোলা আছিলো। আর এইডা দেখার পর আমি বেহুশ হইয়া যাই। এরপর জ্ঞান আইছে যখন,তখন আমি আমারে হসলিটালে দেখি। আমার একটা চোখ তখন থেইকা নাই। পরে বউ বাচ্চা লইয়া আমি এই গেরামে চইলা আইছি। 

333333

- সো স্যাড। আপনার সাথে অনেক খারাপ হয়েছে। কিন্তু আপনি যেহেতু ওই অশরীরীকে নিজের চোখেই দেখেছেন। তবে এখানে আসতে ভয় পাননি কেনো?

- কারণ আমার বিশ্বাস, একদিন কেও আইবো,আর ওই অশরীরীরে মারবো। ওই গেরামে কেও যাইতে চায়না। আপনি যখন কইলেন ওখানে যাইবেন। তখন আমার মনে হইলো আপনি এই এলাকারে মুক্ত করবার লাইগা আইছেন। আমার কেন জানি মনে হইতাছে আপনে ওই অশরীরীরে মারতে আইছেন। গেরামের সবাইরে মুক্ত করবার লাইগা আইছেন।

- ভুল ধারণা। আমি শুধুই একজন লেখক। আর আমি এসেছি এই ঘটনাকে বইয়ের পাতায় তোলার জন্য। আচ্ছা,শেষ একটা কথা বলেছেন যে গ্রামের মানুষদের মুক্ত করার বিষয়ে। কিন্তু গ্রামে এমন হবে জেনেও মানুষরা পালিয়ে কেনো আসেনা। তারা গ্রামেই থেকে যাচ্ছে কেনো।

- এইডাই তো বরো পরবলেম।এই নদী দিয়া সবাই ওপারে যাইতে পারে,কিন্তু আইবার পারেনা। নৌকা নিজে নিজে ঢুইবা যায়। 

- মানে? তাহলে আমরা কিভাবে যাবো। এই ঘাটে তো কোনো মাঝি নেই। ওরা কিভাবে আসবে আমাদের নিতে।

- অপেক্ষা করা লাগবো আপনাগো। এহন কয়ডা বাজে দেহেন তো?

- রাত ১২ঃ৩৫। কেনো?

- আর অল্প কিছুক্ষন অপেক্ষা করেন। ১ টা বাজলেই ঘাটে একখান নৌকা ভাসা দিবো। হেনে মাঝি থাকবো না। আপনাগো নিজে থেইকা নৌকা চালাইতে হইবো। 

- ওহ মাই গড। এইটা যাষ্ট একটা হরর স্টোরি হবে। 

- বুঝিনাই স্যার, কিয়ের হুরুর ইসটরি।

- না তেমন কিছু না। আপনার ভাড়া কত?

- ৩২০ টাহা স্যার।

- এই নিন। আর ধন্যবাদ ইনফরমেশন দেওয়ার জন্য।

- কিয়ের ইনিমরেপসন? 

- না মানে তথ্য দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। 

- আচ্ছা স্যার। আমি তাইলে যাইগা।


এই বলেই ড্রাইভার গাড়িতে উঠে। এরপর সে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যায়।  চারদিকে ফাকা মাঠ। বর্ষার সময় হলেও, কেমন যেনো কুয়াশার মতো হয়ে আছে সব। একটা নদী সামনে। তার উপর দুজন মানুষ একা দাঁড়িয়ে। ভয়ের একটা ইঙ্গিত দিচ্ছে ওদের বারবার। নিলয়ের প্রচুর ভয় লাগছে। সে পকেট থেকে একটা সিগারেট নিয়ে মাঠে বসে পড়ে। রিয়াজ খাতার উপর ড্রাইভারের বলা ঘটনাটা লেখা শুরু করে। নিলয় রিয়াজকে হটাৎ প্রশ্ন করলো," আচ্ছা রিয়াজ। আমরা ফিরে গেলে কেমন হয়? " রিয়াজ কিছুটা অবাক হয়ে নিলয়কে বলল," মানে কি। এতোদূর এসে তুই ফিরে যাবার কথা বলছিস? "। নিলয় একটু ভয়ের স্বরেই আবার জবাব দিচ্ছে, " না মানে দেখ। আমি ভাবিনি ঘটনা এতো ভয়ংকর হয়ে দাঁড়াবে। একটা অশরীরী লোকটার চোখ কিভাবে খুলে ফেললো। যদি সে আমাদের সামনেও এসে দাঁড়ায়? আর আমাদের চোখটাও যদি খুলে খেয়ে ফেলে? আমাদের কাছে না আছে কোনো শক্তি আর না আছে কোনো মন্ত্র জানা। যদি সে আমাদের মেরে ফেলে? "। রিয়াজ একটা স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে বলল," আমি আমার বই মার্কেটে হিট খাওয়ানোর জন্য যেহেতু নেমেছি। তবে আমি তা করেই যাবো। এতে যদি মৃত্যুর মুখোমুখি হতেই হয়,তবে হবোই"। নিলয় কথাটা শুনে আবার বলল,

- কিন্তু আমি তো এখানে নিশ্চিত মরণ দেখতে পাচ্ছি। দেখ,প্রথমদিনই আমাদের কি হাল হাচ্ছে। ফাকা একটা শনশান স্থানে এসে পড়লাম। এখন যদি কোনো অশরীরী এসে আমাদের উপর হামলা করে দেয়। বেচে ফেরার কোনো চান্সই নাই। তার উপর আবার ভৌতিক ভাবে নৌকা উঠবে। আবার সেই ভূতের নৌকায় আমাদের উঠতেও হবে। ব্যাপারটা বেশি হয়ে যাচ্ছেনা? এক কাজ করি বন্ধু। আমরা ফিরে যাই। 

- তুই কি পাগল হয়ে গেলি? ড্রাইভার তো বলেই গেলো যে এই নৌকায় যাওয়া যায়। বিপদ থাকলে তো সে আগে থেকেই বলে°°°° ( রিয়াজ কথার মাঝেই চুপ হয়ে গেলো।নিলয় অবাক হয়ে রিয়াজের দিকে তাকাই আছে। রিয়াজ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর আবার বলা শুরু করে) ওয়েট ওয়েট, একটা ব্যাপার তো খেয়ালই করলাম না। 

- কি?

4444444

- আমাদের ধোকা দেওয়া হচ্ছে নাতো?

- মানে? 

- একটা সিগারেট দে আগে।

( নিলয় একটা সিগারেট বের করে দেয়। রিয়াজ সিগারেট ধরিয়ে বলতে শুরু করে আবার)

- ড্রাইভার বলেছে গ্রামে যে কেও যেতে পারে,কিন্তু আসতে পারেনা। তাহলে প্রশ্ন,ড্রাইভার কিভাবে এলো?

( কথাটা শুনে নিলয়ও বেশ হতভাগ হয়ে যায়। নিলয়ও এইবার চিন্তা করে বলতে লাগলো)

- সত্যিই তো? ড্রাইভার তো ফিরে আসতে পারবেনা। তবে সে কিভাবে এলো? তাও বউ বাচ্চা নিয়ে?

- সেটাই তো। আর সে এইটাও বা জানে কিভাবে যে রাত ১ টায় নৌকা ভাসা দেয়। কারণ ড্রাইভার নিজেই বলল সেই গ্রামে নাকি কেও যায়না। যদি কেও না যায়,তবে এই ভাসা দেওয়া নৌকার ব্যাপারেও কারো জানার কথা না। তবে ড্রাইভার কিভাবে জানলো? আর নদীর ওপাড়েই যে গালকাটা কবরস্থান, তার গ্যারান্টি কি?

- শিট,আমার ভয় হচ্ছে রিয়াজ। কোনোভাবে আমরা ফেসে যাইনি তো?

- বুঝতেছিনা। কিন্তু আরেকটা কথা,আমরা শুনেছি একটা অশরীরী মানুষদের খুন করতেছে। তাহলে ড্রাইভার কিভাবে বেচে গেলো? অশরীরীর সামনে পড়ে যাওয়া মানেই তো মৃত্যু। 

- তবে কি এইটা কোনো ড্রাইভার নয়?


কথাটা বলেই নিলয় তাকিয়ে আছে রিয়াজের দিকে,আর রিয়াজ তাকিয়ে আছে নিলয়ের দিকে। তাদের সাথে হয়তো খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে। তারা এতক্ষণ একটা মৃত মানুষের সাথে ছিলো। আর তাদের এখানে এনেছেও একটা মৃত মানুষ। 


চলবে....?

555555



0 Post a Comment:

Post a Comment