গল্প: হতভাগা
পর্ব: ৩
লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ
ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ১১টা ছুঁই ছুঁই। নাদিয়া জানালার পাশে দাঁড়িয়ে চাঁদের আলোয় নিজের প্রতিবিম্ব দেখছে। কিছুদিন আগেও এই জানালাটা ছিল তার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা—রায়হানের অপেক্ষায় প্রতিদিন বসে থাকত এখানেই। কিন্তু এখন?
এই জানালাটা থেকেই তো ঘরে ঢুকেছিল সেই অমানুষটা। এই জানালার দিকেই তাকিয়ে থাকলে তার গায়ে কাঁটা দেয়। চোখ বন্ধ করলেই মনে পড়ে সেই রাতের ভয়াবহতা। গায়ের প্রতিটি কোষে যেন এখনও সেই আতঙ্ক লেগে আছে।
পেছন থেকে রায়হান ধীরে ধীরে এসে বলে,
— “তুমি আজ খুব চুপচাপ, নাদিয়া। কেমন লাগছে তোমার এখন?”
নাদিয়া ধীরে বলল,
— “আমি জানি না। কখনো মনে হয় আমি বেঁচে আছি, কখনো মনে হয় যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছি। তুমি পাশে না থাকলে হয়তো আমি শেষ হয়ে যেতাম।”
রায়হান ওর কাঁধে হাত রাখে,
— “তুমি সাহস দেখিয়েছো। এখন আমাদের লড়াই শুরু। শুধু অপরাধীকে ধরা পড়লেই সব শেষ হয় না। তোমাকে সমাজের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে। কারণ তুমি অপরাধী না, তুমি একজন ভুক্তভোগী, একজন যোদ্ধা।”
নাদিয়া একটু হেসে বলল,
— “যোদ্ধারা কি কাঁদে, রায়হান?”
— “হ্যাঁ, কিন্তু চোখের পানি দিয়ে তারা ঘাম মুছে নেয়।”
রায়হান ওর হাত ধরে।
— “আমি আছি, নাদিয়া। সব সময়।”
পরদিন সকালে থানায় আবার হাজির হয় রায়হান আর নাদিয়া। মামলার তদন্তকারী অফিসার ইন্সপেক্টর জাকির হোসেন খুব আন্তরিকভাবে তাদের গ্রহণ করে।
— “আপনার সাহসকে আমি সম্মান করি, ভাবি। অনেকেই মুখ খোলেন না। আপনি মুখ খুলেছেন, বিচার চাইছেন। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা করব।”
রায়হান প্রশ্ন করল,
— “কিন্তু ওই লোকটাকে ধরার পর কী করলেন আপনারা?”
— “আমরা তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। সে শুরুতে কিছুই বলছিল না। কিন্তু আজ সকালে সে স্বীকার করেছে, সে একা নয়, আরও দুইজন ছিল। এই ঘটনাটা ছিল পরিকল্পিত। তারা আগে থেকেই জানত বাড়িতে মেয়েটা একা থাকে।”
নাদিয়ার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে যায়,
— “মানে… এটা গ্যাং প্ল্যানড ছিল?”
— “হ্যাঁ। আমরা সেই দুইজনকে ধরার চেষ্টা করছি। তাদের নাম পাওয়া গেছে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।”
রায়হান মুখ শক্ত করে বলল,
— “আমরা বিচার চাই, স্যার। যেন আর কোনো নাদিয়াকে এমন নির্যাতনের শিকার না হতে হয়।”
ইন্সপেক্টর জাকির মাথা নোয়ালেন,
— “আমরা কাজ করছি, ভাই। সমাজ বদলাবে ধৈর্য আর সাহসের আলোয়।”
গ্রামে খবর ছড়িয়ে পড়ে—নাদিয়া মামলা করেছে, অপরাধী ধরা পড়েছে, এবং সে একা ছিল না। পুরো ঘটনা যে ধর্ষণ, তা বোঝার পর গ্রামের অনেকেই নাদিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে। রুবিনা নিজেই একদিন এসে বলে,
— “ভাবি, আমি তো কিছুই বুঝতে পারিনি সেদিন। আমি ভাবতাম, আপনি অন্যায় করেছেন। আমি ভুল করেছি।”
নাদিয়া বলে,
— “আপনি তো শুধু চোখে যা দেখেছেন সেটাই বলেছেন। কিন্তু সব সময় চোখে দেখা সত্য হয় না, তাই না?”
রুবিনা মাথা নিচু করে বলে,
— “আপনি যদি পারেন, আমাকে ক্ষমা করে দিন।”
নাদিয়া চোখ বন্ধ করে গভীরভাবে নিঃশ্বাস নেয়।
— “আমি আপনাকে দোষ দিই না। দোষ ওই সমাজের, যারা মেয়েদের চরিত্র নিয়ে আগে বিচার করে, তারপর প্রশ্ন করে।”
গল্পের মাঝেই চলতে থাকে মামলার শুনানি। অপরাধীরা একে একে ধরা পড়ে। আদালতে তাদের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয় নাদিয়াকে। সেই চাহনি, সেই চোখ—সবকিছুই যেন আবার তাকে সেই ভয়াল রাতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু এবার সে একা নয়। রায়হান, তানহা, এমনকি শাহিনুর বেগমও এবার তার পাশে।
শাহিনুর বেগম আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বলে,
— “আমি একটা ভুল করেছিলাম। আমি আমার ছেলের বউকে না জিজ্ঞেস করেই দোষী ভেবেছিলাম। আজ বুঝি, সমাজের বড় সমস্যা হলো—আমরা নারীদের দোষারোপ করতে খুব তাড়াতাড়ি করি। এবার থেকে আমি আর কোনো মেয়ে সম্পর্কে না জেনে কোনো কথা বলব না। বরং পাশে দাঁড়াবো।”
এই কথা শুনে চারদিকে প্রশংসা শুরু হয়। পত্রিকায় শিরোনাম হয়:
"একজন মা’র উপলব্ধি বদলে দিলো সমাজের চোখ"
মাস দুয়েক কেটে যায়। মামলার রায় ঘোষণা হয়। তিনজন আসামির প্রত্যেককে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আদালত বলে,
— “এই রায়ের মাধ্যমে আমরা একটি বার্তা দিতে চাই—নারী নির্যাতন কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। যারা নির্যাতনের শিকার, তারা যদি মুখ খোলে, তাহলে বিচার হয়—আজ তার উদাহরণ হলো এই রায়।”
আদালত কক্ষে উপস্থিত সবাই হাততালি দেয়।
নাদিয়ার চোখে জল, রায়হান ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
— “এটাই তোমার বিজয়, নাদিয়া।”
নাদিয়া বলে,
— “আমাদের বিজয়, রায়হান। আমাদের ভালোবাসা, বিশ্বাস, আর সাহসের জয়।”
গল্প এখানেই শেষ হতো যদি না সমাজ হতো আরও গভীর, আরও খোঁচাদায়ী।
যখন নাদিয়া সন্তান জন্ম দেয়, তখন হাসপাতালের নার্সরা কানে কানে কথা বলে,
— “এই সেই মেয়ে, যার ধর্ষণের ঘটনা এত শোরগোল তুলেছিল!”
পাশের বেডের রোগিণী বলে,
— “এই মেয়ের সাহস আছে, তবে লজ্জাও তো কিছু থাকা দরকার ছিল!”
নাদিয়া এসব শুনেও মুখ ফিরিয়ে রাখে। এবার সে আর কাঁদে না, ভেঙে পড়ে না। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু বলে,
— “তুই আমার গর্ব, আমার সাহস। তুই কোনো পাপের সন্তান না, তুই ন্যায়ের প্রতীক। তোর জন্যই আমি লড়েছি। তুইই আমার নতুন ভোর।
গ্রামের স্কুলে নাদিয়া এখন মেয়েদের নিয়ে কাজ করে—সচেতনতা সেশনে নিজের গল্প বলে। ছোট ছোট মেয়েরা বলে,
— “ভাবি, আপনাকে দেখে সাহস পাই। যদি এমন কিছু হয়, আমরাও কথা বলব।”
রায়হান বলে,
— “তুমি শুধু একজন মা না, তুমি একটা প্রতীক—একটা প্রেরণা।”
তানহা সাংবাদিক হতে চায় এখন। বলে,
— “আমি ভাবির গল্প নিয়ে একটা ডকুমেন্টারি বানাবো। যাতে আরও মেয়েরা সাহস পায়।”
চলবে…
পর্ব: ৩
গল্প: হতভাগা
লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ
💝হতভাগা গল্পটি সম্পন্ন pdf নিতে চান তাহলে এ নাম্বার 01897682335 হোয়াটসঅ্যাপ বা ইমু করুন নাহলে পেইজে ইনবক্স করুন।
⭕শত্য প্রযোজ্য।
💝প্রিয় পাঠক, আপনার জন্য একটি ক্ষুদ্র অনুরোধ!
আপনি যখন আমার গল্পটি পড়ছেন, তখন শুধু একটি গল্পই নয়—আমার স্বপ্নকেও সমর্থন করছেন। গল্পের শেষে থাকা **মাত্র ৫ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপনটি** ক্লিক করলে আমার সামান্য আয় হয়। ফেসবুক বা ওয়েবসাইট সরাসরি আয় দেয় না, কিন্তু **আপনার একটি ক্লিক** আমাকে নিয়মিত গল্প লিখতে অনুপ্রাণিত করে!
এই ছোট্ট সহযোগিতাটুকুই আমার জন্য বিশাল। আপনার ভালোবাসা আর সমর্থন পেলে আমি আরও মন দিয়ে গল্প লিখতে পারব। ❤️
**🔗 বিজ্ঞাপন লিঙ্ক:** 👇
**#আপনার_এক_ক্লিক_আমার_অনুপ্রেরণা**
✨ **ধন্যবাদ** আমার গল্পের পাশে থাকার জন্য!
৪থ পর্ব লিংক👇
https//mgugoloplikestorehotobagapartth
0 Post a Comment:
Post a Comment