গল্প- পিশাচ সুন্দরী ( পর্ব-০৫)
লেখক- রিয়াজ রাজ
----------------------------------
এদিকে রিয়াজের বাবা মা দৌড়ে আসে। বাহির থেকে দরজা পেটাচ্ছে ওরা। তাজকিয়া দৌড়ে দরজা খুলতে যাবে,তখনি রিয়াজ তাজকিয়ার চুলের মুঠি ধরে জোরে ফ্লোরে আছাড় মেরে দেয়।
ফ্লোরে সজোরে আছাড় খাওয়ায় তাজকিয়ার মাথা কিছুটা ফেটে যায়। রক্ত বের হয়ে ফ্লোর যেনো ভেসে যাচ্ছে। অন্যদিকে রিয়াজের মা বাবা বাহির থেকে দরজা পিটিয়েই যাচ্ছে। রিয়াজ দরজার কাছে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো। রিয়াজের মা বাবা তাজকিয়াকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লোরে দেখে অবাক হয়ে যায়। রিয়াজের মুখে যেনো কাল বৈশাখীর ঝড় দেখা যাচ্ছে। পুরা মুখ রাগে কালো হয়ে আছে। রিয়াজের মা দৌড়ে তাজকিয়ার কাছে আসে। এদিকে রিয়াজ গেঞ্জিটা হাতে নিয়ে পড়ে নেয়। এরপর রুম থেকে বের হয়ে যায়। রিয়াজের বাবা তাজকিয়াকে কোলে নিয়ে বের হয়ে আসছে। রিয়াজের মা রিয়াজের এমন আচরণ দেখে অবাকই হচ্ছে। তাজকিয়া বেহুশ হয়ে যায়। হসপিটালে নেওয়ার জন্য সবাই তাড়াহুড়ো করলেও,রিয়াজ নিছে এসে সোফায় বসে টিভি অন করে দেয়। অদ্ভুত সব কান্ড রিয়াজের মায়ের সহ্য হয়নি। তাজকিয়াকে নিয়ে রিয়াজের বাবা বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। পাশের গলিতেই হসপিটাল আছে। এদিকে রিয়াজের মা রিয়াজকে বলে উঠলো," তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? কি হয়েছে তো? তাজকিয়াকে এমনভাবে মারলি কেন? বের হয়ে যা আমার বাসা থেকে"। রিয়াজের মা কথাটা শেষ না করতেই রিয়াজ হাতে থাকা রিমোট ছুড়ে মারে ওর মায়ের দিকে। কপাল ফেটে যায় উনারও। রিয়াজের মা ব্যাথার থেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছে। রিয়াজ শেষমেশ ওর মাকে আঘাত করলো। এইটাও সহ্য হয়নি উনার। উনি আর আর কিছু না বলে সোজা বের হয়ে যায়। রওনা দেয় হসপিটালের দিকে। তাজকিয়াকে আগে সুস্থ করতে হবে।
ঘটনা এমন এক পর্যায়ে দাড়িয়েছে। যেখানে রিয়াজ না করছে কাওকে পরোয়া। আর না পাচ্ছে ভয়। ওর মাঝে কি সেই পিশাচ অবস্থান করছে? নাকি আলাদা কোনো মায়া চালিয়ে দিচ্ছে। রিয়াজ এখন আর নিজের কন্ট্রোলে নেই । কিন্তু প্রশ্ন এক জায়গায়, পিশাচটা এমন কেনো করছে। রিয়াজকেই বা কেনো? রহস্য। প্রতিটি স্টেপে রহস্য হেলছে। যার সমাধান কারো জানা নেই। কারো না।
এদিকে তাজকিয়ার জ্ঞান ফিরে। ডক্টর ব্যান্ডেজ করে দেয় তাজকিয়াকে,সাথে রিয়াজের মাকেও। ভয়ে ওরা আর নিজেদের বাড়ি ফিরেনি। তিনজন মিলেই চলে যায় তাজকিয়াদের বাসায়। তাজকিয়ার বাসায় এ নিয়ে সমালোচনাও শুরু হয়। কারণ তাজকিয়া আগেই বুঝতে পেরেছে অলৌকিক কোনো শক্তির হাত আছে। আজকের ঘটনার পর নিশ্চিত হয় সে। এখন আর কারো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছেনা। সবাই বুঝে গেছে রিয়াজের শরীরে ভূত প্রবেশ করেছে। চিন্তিত পুরো পরিবার। তাজকিয়ার মা বাবা আর রিয়াজের মা বাবা দুই পরিবারই হতাশ । এর সমাধান কি? তখনি রিয়াজের বাবা হোসেন সাহেব বলে উঠলো," সামনেই তো মন্টু কবিরাজের দোকান আছে। আমরা কি উনার কাছে যাবো? হয়তো কোনো সমাধান উনিই দিবেন?"। হোসেন সাহেবের কথায় সবাই সম্মতি জানালো। সাথে সাথেই সবাই বের হয়ে যায়। রিয়াজের বাসা থেকে মন্টু কবিরাজের দোকান দেড় কিলো হলেও,তাজকিয়ার বাসা থেকে মাত্র ৬ মিনিট লাগে ।
রাস্তায় নেমে পড়ে পুরো পরিবার । সবার চোখে কান্নার ভাব। কেও কাদছে কষ্টে,কেও কাদছে ভয়ে। কারণ রিয়াজের কিছু হলে দুই পারিবারই ভেঙ্গে যাবে । আর এই পরিবার আজ থেকে নয়,গত ৯ বছর যাবত মিলেমিশে আছে। সম্পর্ক শক্ত করার জন্যেই তাজকিয়ার সাথে রিয়াজের বিয়ে ঠিক করেন। কিন্তু এরই মাঝে নেমে এলো এক ধমকা হাওয়া। যা উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে সকল খুশির সাম্রাজ্য।
মন্টু কবিরাজের দোকানের সামনে আসার পর সবাই দেখতে পায় প্রায় ২০০ মানুষ সিরিয়াল ধরে আছে। এতো কাস্টমার তো কখনো হয়না। আবার খেয়াল করলে দেখা যায়, কারো হাতে ব্যান্ডেজ কারো পায়ে আবার কারো মাথায়। সবার চোখে অশ্রুপাত। মনে হচ্ছে একই সমস্যায় সবাই পড়েছে। হোসেন সাহেব একজনকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলো। উনি কাদতে কাদতে বলল, " সাহেব। আমগো বহুত বিপদ হইয়া গেছে। আমার পোলায় আমারে মাইরা দেহেন মাথা ফাডাই দিছে। আমার মাইয়ারে ছুরি দিয়া কোপাইয়া খুন কইরা ফেলছে। আমার বউরে লাথি মাইরা ফালাই দিছে। আমার পোলায় বহুত ভালা। ওর গায়ে ভূত ঢুইকা গেছে । এহন কবিরাজের কাছে আইলাম। কিন্তু কবিরাজ সকাল ৮ টায় সবাইরে কইলো হেয় নাকি একটা তাবিজ বানাইতাছে। সবাইরে সিরিয়াল ধরতে কইলো। বেইন্না তো আমরা ১৬ জন আছিলাম। এরপর একি সমস্যা লইয়া বাকিরাও আইলো "। লোকটা কথাগুলো বলে নিজের কপালে নিজেই থাপ্পড় দিতে থাকে আর কান্না শুরু করে। উনার কথা শুনে সবাই কান্না থামাতে পারেনি। সবার চোখে পানি। কিন্তু কি করার, একই পথের পথিক সবাই। কবিরাজ মন্টুর অপেক্ষায় সিরিয়াল ধরে সবাই ।
বিকেল ঘনাঘন হয়ে গেলো। অথচ মন্টু কবিরাজের কোনো ডাক আসেনি। অবশেষে রিয়াজের বাবা কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। উনি সিরিয়াল থেকে বের হয়ে দোকানের দিকে হাটা শুরু করে । সবাই চিল্লাচিল্লি করছে,কারো কথায় কান দেয়নি উনি। সোজা গিয়ে মন্টু কবিরাজের দোকানের দরজায় সজোরে লাথি মারে।আর দরজা ভেঙ্গে পড়ে যায় নিছে। এরপর যা দেখলো,তা সবার জন্য একটা বড়সড় ধাক্কা হয়ে প্রকাশ পায়। কবিরাজ মন্টুর মাথা আলাদা, পা আলাদা,হাত আলাদা হয়ে আছে। যেনো কেও কুচি কুচি করে উনাকে কেটে ফেলে গেছে। উনার এই অবস্থা দেখে দোকানের সামনে আবার কান্নার আওয়াজ উঠে। শেষ যে উছিলা ছিলো, সেটাও হারালো সবাই। কিন্তু লক্ষ করার মতো একটা বিষয় হচ্ছে,রক্ত দিয়ে মাটিতে লেখা ছিলো ০৭ঃ০০। অর্থাৎ ৭ টার সময়টাকে ইঙ্গিত করে কিছু একটা বলা হয়েছে।
সবাই আবার আরো একটি আতঙ্কে দিগ্বিদিক হয়ে গেলো। এই ৭ টা কবেকার,আজ সন্ধ্যা ৭টা? নাকি কাল সকালের। আর কি হবে ৭টায়। কোনো বড়সড় ঝড় আসবে? শেষমেশ আর কোনো উপায় না পেয়ে সবাই মাঠে বসে পড়ে। জীবনের মায়া ছেড়ে দিয়েছে কয়েকজন। একজন বসা থেকে হুট করে উঠেই বলল," আমার আর কি বাকি আছে। পুরো পরিবার হারালাম। ৭টায় হয়তো সেই অশরীরীর হাতে আমাকেও মরতে হবে। তারচেয়ে বরং এখনি মরে যাই। অন্তত কষ্ট পেয়ে মরতে হবেনা,"। বলেই উনি রস্তা থেকে একটা লোহা নিয়ে নিজের গলায় নিজেই ঢুকিয়ে দেয়। চিৎচিৎ করে রক্ত উড়ে পড়ে কয়েকজনের মুখে। সবাই চিল্লাচিল্লি করে উনাকে থামাতে চেয়েছে,কিন্তু তার আগেই মারা যান উনি। তার এই কান্ড দেখে আরো দুজন দৌড়ে গিয়ে দেওয়ালের সাথে নিজের মাথা নিজে পিটানো শুরু করে। দুয়েকটা মারার পরই মাথার খুলি ফেটে মগজ বের হয়ে আসে। মারা যান তারাও। এইবার সবাই আরো আতঙ্কিত হয়ে গেলো। হুট করে আবার কে উঠে নিজেকে নিজেই মেরে ফেলবে। সবার ভাবনার মাঝে এইবার রিয়াজের বাবাও দাড়িয়ে যায়। এ বুঝি আরেকজন মরতে যাচ্ছে।
কিন্তু রিয়াজের বাবা তা না করে সবার উদ্দেশ্যে বলল," দেখুন সবাই। এখানে আমরা কেওই নিরাপদ নয় । সবাই বিপদগ্রস্ত হয়ে আছে। কিন্তু টপিক একটাই। আমাদের ছেলেদেরকে কোনো এক ডাইনী বশ করে নিয়েছে। খেয়াল করলে দেখবেন,কোনো মেয়ের গায়ে সেই ডাইনী প্রবেশ করেনি। কোনো বৃদ্ধ ব্যাক্তির দেহেও না। শুধু যুবক ছেলেদের বশ করেছে। এর কারণ কি? কেও বলতে পারে?"। রিয়াজের বাবার প্রশ্নের জবাব কারো কাছে নেই। কারণ এইটা একটা রহস্য। যা পূর্বে ব্যাখ্যা করার শক্তি নেই কারো।।ঘটনাস্থলে যা হচ্ছে বা হবে। নিজের চোখে দেখার পর বিশ্লেষণ করার শব্দ পাবে। এর আগে সবাই শুধু দর্শক। সবাই মাথা নিচু করে ফেলে। রিয়াজের বাবা আবার বলল," জানি উত্তর কারো কাছে নেই। কারণ এমন হবে আমরা কখনো ভাবিনি। হুট করে হয়ে গেছে। এখনো হয়ে আসছে। আর সামনেও হবে। কিন্তু আমরা মানুষ। আমরা হার মানতে পারিনা। জন্মের আগে আমরা যুদ্ধ করে এসেছি। আমরা প্রতিটি মানুষ একেকটা যুদ্ধা। হার কেনো মানবো আমরা? কে পুরুষ, কে মহিলা সেটা ভাবার সময় নেই। আমরা যুদ্ধা,আমরা লড়াই করে যাবো। নিজের জন্য,নিজেদের ছেলের জন্য"। রিয়াজের বাবার কথায় সবাই হাততালি দেয়। সবাই একত্রিত হয়ে এক কন্ঠে আওয়াজ তুলল," লড়বো, লড়বো,লড়বো"। একটা শ্লোগান। কিন্তু শ্লোগানটা শুধুই স্লোগান নয়, সবার মনে এক একটা বিন্দু পরিমাণের শক্তি। রিয়াজের বাবা আবার বললেন," থামুন সবাই। সবাই বুঝতে পেরেছেন এইটাই বেশি। এখানে অনেক পুলিশও আছে। তারাও বিপদগ্রস্ত।অর্থাৎ এখন আমাদের হাতে একটাই পথ খোলা আছে। এই এলাকা থেকে কেও পালাতে পারছেনা। এলাকার সীমানায় একটা মায়াজাল পড়েছে। এ এলাকায় নেটওয়ার্ক ও বন্ধ হয়ে গেছে। তাই অন্য এলাকার বা শহরের মানুষ আমাদের অবস্থার ব্যাপারে জানেনা। আমরা সবাই যার যার বাড়িতে যাই। সন্ধার অপেক্ষা করি । যদি আমাদের মাঠে নামতে হয়,তবে আমরা নামবো। কিন্তু পরিস্থিতি বুঝেশুনে। মনে রাখবেন,যারা মরেছে মরে গেছে। যারা বেচে আছে,অন্তত তাদের বাচাতে হবে। "।
আকাশটা আজ ভয়ংকর রুপ ধারণ করেছে। বাতাসটা কেমন যেনো হিংস্র হয়ে যাচ্ছে। দেহে স্পর্শ হওয়া মাত্রই যেনো কারো আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সবাই সবার ঘরে অবস্থান করলেও,প্রতিটি মানুষ জানালার পাশে দাড়ানো। সবার চোখ বাহিরে। সাড়ে ৬ টা বাজে। আর ৩০ মিনিট পর কি হবে,কি হতে যাচ্ছে,সেই দৃশ্য দেখার অপেক্ষা। আরেকটা কথা। যে ছেলেগুলোকে পিশাচটা বশ করেছে,তারা কেওই বাসায় নেই। প্রতিটি ছেলেই গায়েব। তারা কোথায় গেছে সবার অজানা। ঘড়ির কাটা টিকটিক করে এগিয়ে যাচ্ছে। সময় যতটা ঘনিয়ে আসছে, সবার ভিতরে ভয়ের চাপটা বেড়েই যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরেই ৭টা বাজবে। কি হবে,কি হবে ভেবে সবাই হতাশ।
৭ টা বেজে গেছে। সবাই বাহিরে তাকিয়ে আছে। কোনো সাড়া শব্দ নেই। বুক ধুকধুক করছে সবার। কিছুই হয়নি,সবাই নির্বাক হয়ে গেলো। জানালা থেকে চোখ সরাতে যাবে, তখনি শুরু হয় ঝড়।
প্রচুর বাতাস বইতে লাগলো বাহিরে। শুধু প্রচুর না,মাত্রাধিক বাতাস বইতে শুরু করে। বাহিরে যাদের গাড়ি পার্কিং করা ছিলো,গাড়িগুলো বাতাসে উড়ে অন্য বাড়ির সামনে গিয়ে পড়ছে। রাস্তার পাশে কয়েকজনের দোকান পার্ট ভেঙ্গে বাতাসে উড়ে যাচ্ছে । ঘুর্ণিঝড়ের মতো এক পলকে সব উতালপাতাল করে থেমে যায় বাতাস ।
এরপর আচমকা একটা চিৎকার শুনতে পায় সবাই। খুবি ভয়ানক চিৎকার। সবাই তাকায় সেদিকে। আর দেখে,প্রতিটি যুবক ছেলে মাতালের মতো কাদতে কাদতে হেটে আসছে। ওদের গলার স্বর খুবি ভয়ানক হয়ে গেছে। কোনো জন্তুর শব্দের মতো। আর সব থেকে বেশি অবাক করার বিষয় হচ্ছে,সাবার সামনে এবং মাঝে রিয়াজ হাটছে। যেনো সবার লিডার সে। কিন্তু এরা হেটে কোথায় যাচ্ছে। সবাই জানালা দিয়ে শুধু তাকিয়ে কান্ড দেখে যাচ্ছে। তাজকিয়া কান্না করতে করতে বেহুশ হবার অবস্থা । এদিকে আচমকা প্রতিটি যুবক মানুষের ঘরের দরজা ভাঙ্গা শুরু করে । এরপর বাসার ভিতর থেকে মহিলাদের বের করে কামড়াচ্ছে। রিয়াজ ও একটা মহিলার ঘাড় ধরে কামড় মেরে দিয়েছে। মহিলার গায়ের রক্তে রিয়াজের মুখ রক্তাক্ত হয়ে যায়।
জানালা দিয়ে সবাই এসব দেখছে আর কান্না করে যাচ্ছে। কারণ কিছুক্ষণ পর সবার উপর হামলা আসবে। ওরা একটা একটা বাসা টার্গেট করছে,আর খুন করছে। কেও কান্না করছে, কেও বমি করে দিচ্ছে আর কেও এসব সহ্য না করতে পেরে অজ্ঞান হয়ে গেছে। রিয়াজের বাবা জানালা দিয়ে চিৎকার মেরে বলল," সবাই বের হও। যুদ্ধের সময় এসে গেছে"।
কিন্তু একটা লোকও বের হয়নি। সবাই ভয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিয়াজের বাবা বুঝতে পারে,ভয়ে কেওই এগিয়ে আসবেনা। কিন্তু থেকেও বা লাভ কি,যেহেতু মরতেই হবে। রিয়াজের বাবা একটা ধারালো তলোয়ার নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। পরিবারের সবাই আটকাতে চাচ্ছে,কিন্তু কে শুনে কার কথা। উনি সবাইকে ধাক্কা মেরে বেরিয়ে আসে। বাহির থেকে দরজা লক করে দেয়। তখনি ঘটে আরেকটা ঘটনা। আচমকা সবার মাঝখান থেকে বেরিয়ে আসে সেই পিশাচ। সাদা চোখ,কালো দাত,দেহের গঠন প্রায় ১০ ফুট। ভয়ংকর কুৎসিত চেহারা নিয়ে পিশাচটা হাসতে শুরু করে। যুবকরাও পিশাচের হাসির শব্দে থেমে যায়। পিশাচটা এমন ভাবে হাসছে, তার হাসির শব্দে আরো অনেকে অজ্ঞান হয়ে যায়। কারণ এইটা সাধারণ হাসির শব্দ নয়। অনেক,অনেক, অনেক ভয়ংকর হাসি। আর তখনি নতুন আরেকটা ঘটনার সম্মুখীন হয় সবাই।
রিয়াজ আচমকা শার্টের ভিতর থেকে একটা ছুরি বের করে। এরপর দৌড়ে সেই পিশাচের দিকে গিয়ে লাফ মেরে তার গলায় ঢুকিয়ে দেয়। সিনটা এমনভাবে হয়ে গেলো,প্রতিটি মানুষ থ হয়ে যায়। রিয়াজের বাবাও তলোয়ার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। এইটা কি হয়ে গেলো? রিয়াজ এইভাবে পল্টি কেনো নিলো? কিন্তু এদিকে পিশাচটা ছুরির আঘাত সহ্য করতে পারেনি। সবাই দূর থেকে খেয়াল করে যাচ্ছে, রিয়াজের হাতের ছুরিটাও সাধারণ কোনো ছুরি নয়। ছুরিটা প্রচুর আলো ছড়াচ্ছে। আর ছুরির মাঝে অজানা কিছু অক্ষরে কি যেনো লেখা আছে। এ ছুরি রিয়াজ পেয়েছে কোথায়,আর সে পিশাচকে কেনো মারলো? পিশাচটাও হটাৎ চিৎকার দিতে লাগলো। নিজের নখ দিয়ে রিয়াজের পেটে জোরে আছড় মারে। নখের আঘাতে শার্ট ছিড়ে যায়। ভিতরে চামড়াও অনেক কেটে গেছে। ২-৩ ডিগবাজি খেয়ে রিয়াজ অনেক দূরে ছিটকে পড়ে। ছুরিটা রিয়াজের হাতেই। এদিকে পিশাচটা চেচাতে চেচাতে হুট করে ফেটে যায়। নিমিষেই ধোয়ার রুপে উড়ে যায় পিশাচ। মরে যায় সে।
তবে ঘটনা এখানেই শেষ নয়। ছুরিটা ভেঙ্গে গেছে। রিয়াজ যখন ডিগবাজি খাচ্ছিলো,তখন ছুরির উপর আঘাত পড়ে। এদিকে অন্য যে যুবকরা,তারা সবাই ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। সবাই দাত বের করে রিয়াজের দিকে তেড়ে আসতে লাগলো। রিয়াজ বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ছেড়া শার্টটা রাস্তায় ফেলে দিয়ে সেও এগিয়ে যায়। তখনি রিয়াজের পিছন থেকে অন্য আরেকজন দৌড়ে এসে রিয়াজকে ঝাপটে ধরে। আর সে রিয়াজকে নিয়েই আকাশে উড়ে চলে যায়। বশে থাকা যুবকরা আকাশের দিকে তাকিয়ে ভয়ংকর গর্জন ছাড়ছে। রিয়াজের বাবাও উল্টো দৌড়ে বাসায় ঢুকে যায়। বাসায় ঢুকার পর রিয়াজের মা দৌড়ে আসে। উনি এসেই রিয়াজের আব্বুকে বলতে লাগলো,
- রিয়াজকে নিয়ে আকাশে উড়ে যাওয়া ব্যাক্তি অন্য কেও নয়। সে আমাদের তাজকিয়া।
- মানে?
- হ্যাঁ, তাজকিয়া হটাৎ জানালা ভেঙে বাতাসের গতিতে ছুটে যার, আর এক পলকেই রিয়াজকে নিয়ে উড়ে চলে গেলো। আমি বুঝতেছিনা কি হচ্ছে এসব।
এক মুহুর্তেই সব এদিক সেদিক হয়ে গেলো। রিয়াজ তো বশে ছিলো,তবে হটাৎ সে পিশাচকে কেনো আক্রমণ করলো। এমন শক্তি পেয়েছে কোথায় সে। আর রিয়াজও বা সেই ছুরি কোথায় পেলো,যেটা দিয়ে আক্রমণ করেছে সে? পিশাচটা তো মরে গেলো,তবে বাকি যুবকরা কেনো এখনো হিংস্র হয়ে আছে? তারা তো পিশাচের মৃত্যুর পর ঠিক হবার কথা। তবে কি এখানে আরো কেও আছে? মূল শয়তান পিশাচ না? অর্থাৎ অন্য কেও সবাইকে পরিচালনা করতেছে? হটাৎ তাজকিয়ারও বা এই রুপ দেখা গেলো কেনো। তাজকিয়ার ভিতর এমন শক্তি এসেছে কোথা থেকে? নাকি পূর্বের কোনো ঘটনা সংমিশ্রণ আছে এসবে। এখন কি বা হতে যাচ্ছে? কি হবে? ঘটনা কি শেষ, নাকি মাত্র শুরু। রহস্য, রহস্যের মায়াজালে সবি আটকে গেছে। সব রহস্য উদঘাটন হবে,আগামী পর্বে।
চলবে........?
https//wwwprithasbowlastpart.com
0 Post a Comment:
Post a Comment