গল্প: হতভাগা
পর্ব: ১৪
লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ
শায়লা রহমানের শেষ চক্রান্তটি ছিল একটি বড় পরিকল্পনা, যেখানে তার মূল লক্ষ্য ছিল নাদিয়ার শিকড় প্রজেক্টকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া। তিনি জানতেন, নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং আর্থিক শক্তির মাধ্যমে সে কিছুটা সফল হলেও, শিকড় প্রজেক্টের প্রতি বিশ্ববাসীর সহানুভূতির জন্য তার প্রতিক্রিয়া কেবল তীব্র হতে পারে। তাই, এবার শায়লা এবং তার গোপন জোটের সদস্যরা পরিকল্পনা করেছিল, নাদিয়া ও তার প্রজেক্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানের একটি কেলেঙ্কারি তৈরি করা হবে।
শায়লা একটি বিদেশি সংবাদ সংস্থার মাধ্যমে কিছু ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, যাতে মনে হয় শিকড় প্রজেক্ট কিছু অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। কিন্তু কিছুদিন পর, শায়লা বুঝতে পারে যে তার পরিকল্পনা তেমন কার্যকরী হয়নি। কারণ শিকড় প্রজেক্টের সাথে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে এটি ছিল একটি ভালো এবং স্বচ্ছ উদ্যোগ, যা স্বীকৃত ছিল পুরো পৃথিবীজুড়ে।
এবার শায়লা চুপচাপ নিজের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করে। তবে তাকে দ্রুত বুঝতে হয় যে, তার ষড়যন্ত্র যে একেবারে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে, তাতে তার একান্ত প্রতিপক্ষ—নাদিয়া—অবশ্যই জয়ী হতে চলেছে।
শিকড় প্রজেক্ট আন্তর্জাতিক মঞ্চে দ্রুত শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। এটি শুধু একটি উদ্যোগ ছিল না, বরং একটি আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। নাদিয়ার নেতৃত্বে, শিকড় প্রজেক্ট এখন প্রায় প্রতিটি দেশে কার্যক্রম চালাচ্ছিল। নাদিয়া জানত, শায়লা যেকোনো সময় ফের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে পারে, কিন্তু তার বিশ্বাস ছিল জনগণের কাছে শিকড় প্রজেক্টের ভালো কাজগুলি পৌঁছালে শায়লা সফল হতে পারবে না।
একদিন, নাদিয়া তার দলের সদস্যদের নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বলল—
“আমরা যদি নিজেদের বিশ্বাস ও সততার ওপর দাঁড়িয়ে থাকি, তাহলে আমাদের শিকড় প্রজেক্ট কখনোই ব্যর্থ হবে না। শায়লা বা যে কোনো বিরোধী দল আমাদের এই পথ থেকে সরাতে পারবে না। আমাদের কাছে একটাই লক্ষ্য—মানুষের কল্যাণ। আর এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।”
তার এই বক্তব্যে দলের সদস্যরা উৎসাহিত হয়ে উঠল। সবাই জানত, তাদের কাজ শুধু সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা নয়, বরং একটি বৃহত্তর মানবিক দায়বদ্ধতা পূরণ করা। তাই তারা নিজের দায়িত্বে ও দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ চালিয়ে যেতে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল।
শায়লার ষড়যন্ত্র শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যাওয়ার পর, তার জীবনে এক ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে। তার রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক খ্যাতি ধ্বংস হয়ে যায়। দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অনেকের মতে, শায়লা এখন হারিয়ে গেছে—একটি পদক্ষেপের পর, আর কোনো স্থান তার জন্য নেই।
একদিন, শায়লা তার কার্যালয়ে বসে চুপচাপ চিন্তা করছিল। তার কপালে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট ছিল। বারবার তার মস্তিষ্কে ঘুরছিল, “এটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াল? আমি কি ভুল পথে চলে গেছি?”। এভাবে একসময় তার আত্মবিশ্বাস চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল।
তার একমাত্র ভরসা ছিল তার পুরনো বন্ধু এবং রাজনৈতিক সমর্থকরা, যারা এবার তাকে একাই ফেলে দিয়েছে। শায়লা জানত, তার অতীতের অনৈতিক কর্মকাণ্ড এখন আর ঢেকে রাখা সম্ভব নয়।
যদিও শায়লা নিজের ষড়যন্ত্রে পরাজিত হয়েছিল, তবে নাদিয়া জানত, এখনো অনেক কিছু বাকি আছে। শিকড় প্রজেক্টের পথ সহজ নয়। একদিকে শায়লার পরাজয়ের পর, বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক জগৎ থেকে নতুন প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। কিছু গোপন সংস্থা, যারা শায়লার সমর্থক ছিল, তারা এখন শিকড় প্রজেক্টের বিপক্ষে উঠিয়ে নিয়ে আসছে নানা অভিযোগ।
নাদিয়া তার দলের সদস্যদের সাথে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করছিল। একদিন, একটি বৈঠকে সে বলল—
“আমরা যখন এত দূর এসেছি, তখন এই নতুন প্রতিবন্ধকতাগুলো আমাদের পিছিয়ে রাখতে পারবে না। আমাদের দৃষ্টি লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের কাজ এবং উদ্দেশ্যই সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র।”
তার এই উক্তি দলের সকল সদস্যদের এক নতুন উদ্যমের সাথে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করল। তারা জানত, যেকোনো প্রতিবন্ধকতাকেই তারা কাটিয়ে উঠতে পারবে।
আরিজ, যে শিকড় প্রজেক্টের প্রতি তার মায়ের মতোই নিবেদিত ছিল, এবার আরও এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে শুরু করে। একদিন, সে নাদিয়ার কাছে এসে বলল—
“মা, আমি শিকড় প্রজেক্টের জন্য এক নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে চাই। আমাদের সামাজিক কর্মসূচির সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি সংযুক্ত করলে, বিশ্বের সকল শ্রেণির মানুষ সহজেই আমাদের কাজ জানতে পারবে।”
নাদিয়া তার ছেলের কথায় মুগ্ধ হয়ে বলল—
“তুমি যদি সত্যিই এই কাজটি করে দেখাতে পারো, তবে আমাদের কাজের প্রতি মানুষের আগ্রহ আরও বাড়বে। কিন্তু মনে রেখো, এটি শুধু প্রযুক্তির প্রয়োগ নয়, এটি মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার একটি উপায়।”
আরিজ জানত, তার কাজের মাধ্যমে শিকড় প্রজেক্ট আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। সে তার মায়ের কাছ থেকে প্রেরণা নিয়ে, এই উদ্যোগে নিজেকে আরও নিবেদিত করে তুলল।
এভাবে, শিকড় প্রজেক্ট একের পর এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে থাকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে, যেখানে মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং মৌলিক অধিকার পেতে সমস্যায় পড়তে হয়, সেখানে শিকড় প্রজেক্টের কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে থাকে।
নাদিয়া একদিন বলল—
“আমরা এখন যে অবস্থানে আছি, সেটি কোনো সহজ পথ ছিল না। প্রতিটি বাধা, প্রতিটি সমস্যা আমাদের শক্তিশালী করে তুলেছে। এবং আমরা প্রতিটি মানুষের জীবন পরিবর্তন করতে সক্ষম হচ্ছি।”
শিকড় প্রজেক্টের সাফল্য, নাদিয়া এবং তার দলের অবিচল প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ, আন্তর্জাতিক মহলে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছিল। যদিও শায়লা এবং তার সমর্থকরা একের পর এক চক্রান্ত করে গিয়েছিল, তবে নাদিয়া তার সততা এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে সবার কাছে প্রমাণ করে দিয়েছে, সঠিক পথে চললে প্রতিটি বাধাই অতিক্রম করা সম্ভব।
চলবে.....
0 Post a Comment:
Post a Comment