গল্প: হতভাগা
পর্ব: ১২
লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ
নাদিয়া এবং তার দল যখন শিকড় প্রজেক্টের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করতে শুরু করে, তখন পুরো পৃথিবী তাদের কর্মকাণ্ডের দিকে নজর দিতে শুরু করে। নানা দেশের বিভিন্ন সরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকে। বিশ্বের উন্নয়নমূলক সংস্থাগুলির কাছ থেকে নানা ধরনের সহযোগিতা প্রস্তাব আসতে থাকে।
একদিন, নাদিয়া তার দলের সদস্যদের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে বসেছিল। তিনি জানতেন, শিকড় প্রজেক্টের জন্য এই সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে তাদের কাজের প্রতি বিশ্বব্যাপী আগ্রহ, অন্যদিকে শায়লা রহমানের ষড়যন্ত্রের স্মৃতি, সব কিছুই তাকে এক নতুন বাস্তবতার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
“আমরা শুধু আমাদের দেশেই সফল হতে চাই না,” নাদিয়া বলেছিল, “আমাদের লক্ষ্য হল, বিশ্বব্যাপী সমাজে সমান অধিকার, শিক্ষা এবং উন্নতি নিশ্চিত করা। এই প্রজেক্টকে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিতে হবে, যা শুধু সমাজের এক অংশ নয়, বরং সব শ্রেণির মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করবে।”
তার কথায় দৃঢ়তা ছিল, এবং সে জানত যে, এই লড়াইটি তার জীবনকেই শুধু বদলাবে না, পুরো বিশ্বের ভবিষ্যতও পরিবর্তন করতে পারে।
আরিজ, এখন বড় হয়ে উঠছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল যে, সে কিছু একটা করতে চায়—এমন কিছু, যা তার মা নাদিয়ার কাজকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যেতে পারে। সে আজকাল মায়ের সঙ্গে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করত। একদিন, মায়ের কাছে এসে সে বলল—
“মা, আমি জানি তুমি সবসময় আমাদের জন্য কাজ করেছো, কিন্তু আমি চাই, আমি তোমার সাহায্যে বিশ্বের জন্য কিছু করতে পারি। আমি শিকড় প্রজেক্টে একজন সক্রিয় সদস্য হতে চাই।”
নাদিয়া তার চোখে প্রশংসার ছাপ নিয়ে তাকিয়ে বলল—
“তুমি জানো, এটা শুধুমাত্র আমাদের দেশের মানুষদের জন্য নয়, বরং গোটা বিশ্বের জন্য। আর যদি তুমি সত্যিই সাহায্য করতে চাও, তাহলে তোমার প্রতিটি সিদ্ধান্তে বিশ্বমানের মানদণ্ড অনুসরণ করতে হবে। এটা শুধু আমাদের কাজের জন্য নয়, এটা মানবতার জন্য।”
আরিজ জানত, তার সিদ্ধান্ত শুধু তার জীবনে নয়, সমগ্র পৃথিবীকে প্রভাবিত করবে।
যদিও শায়লা রহমান একাধিক অভিযোগের মুখোমুখি হয়ে নিজের ক্ষমতা হারিয়েছে, তবে সে এখনও পর্দার আড়ালে নানা চক্রান্ত করে যাচ্ছিল। তার প্রচেষ্টা ছিল নাদিয়ার শিকড় প্রজেক্টের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিকূলতা সৃষ্টি করা। একদিকে তার অপরাধের বিচার চলছে, অন্যদিকে শায়লা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে নানা গোপন রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরি করতে থাকে।
একদিন, শায়লা এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করছিল। তার উদ্দেশ্য ছিল, শিকড় প্রজেক্টের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো এবং সেই সঙ্গে নাদিয়ার প্রজেক্টের উৎসগুলিতে বাধা সৃষ্টি করা। কিন্তু এই সমস্ত ষড়যন্ত্রের মাঝেও, শায়লা জানত, সে খুব দ্রুতই সামনে আসবে এবং তার গোপন কৌশলগুলো প্রকাশ পাবে। তবে, সে নিশ্চিত ছিল যে, যতই সে অন্ধকারে কাজ করুক না কেন, তার আগ্রাসী পদক্ষেপ শেষ পর্যন্ত নাদিয়ার কাছেই ফিরবে।
শিকড় প্রজেক্টের কাজ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার পর, নাদিয়া একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আমন্ত্রণ পায়। সেখানে বিশ্বের উন্নয়নমূলক সংস্থাগুলির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল, বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
নাদিয়া সম্মেলনে যোগ দেয় এবং সেখানে তার বক্তব্য রাখে—
“শিকড় প্রজেক্ট শুধু একটি উদ্যোগ নয়, এটি পৃথিবীজুড়ে এমন এক আন্দোলন যেখানে প্রতিটি মানুষ নিজে থেকেই নিজেকে উন্নত করতে পারবে। এটি একটি সামাজিক সমাধান যা সকলকে সমান অধিকার ও সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে সমাজের উন্নতি নিশ্চিত করবে।”
তার বক্তব্য শোনার পর, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তার ওপর প্রশংসার ঝড় তোলে। বিভিন্ন দেশের উন্নয়ন সংস্থাগুলি শিকড় প্রজেক্টের সাথে একযোগে কাজ করতে আগ্রহী হয় এবং নতুন অর্থায়ন প্রস্তাব গ্রহণ করতে শুরু করে।
শায়লা, যিনি আশা করেছিলেন নাদিয়ার প্রজেক্টটি দমন করা যাবে, এখন বুঝতে পারে যে, নাদিয়া এবং তার দল সত্যিই বৃহত্তর উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে। শায়লার অসফলতার সাথে সাথে তার ব্যবসায়িক সম্পর্কও হুমকির মুখে পড়ে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থায়নও কমতে শুরু করে।
অন্তর্দ্বন্দ্বে থাকা শায়লা একদিন একটি গোপন মিটিংয়ে নিজের পরিকল্পনা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়—
“যতদূর সম্ভব, আমাকে নাদিয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করতে হবে। কিন্তু এবার আমাকে কিছু নতুন চিন্তা করতে হবে। হয়তো আমি শুধু তার বিরুদ্ধে কাজ করলে হবে না, তার প্রজেক্টের অভ্যন্তরীণ কাজেও ভাঙন ধরাতে হবে।”
শায়লা জানত, তার প্রতিটি পদক্ষেপ নাদিয়ার জন্য আরও বড় এক বিপদ নিয়ে আসবে। তবে শায়লার জানা ছিল না যে, নাদিয়া যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো শক্তি অর্জন করেছে।
এরই মধ্যে, নাদিয়া নিজের প্রজেক্টের নতুন দিক পরিকল্পনা করে চলছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন, শায়লার চক্রান্ত কোনো বাধা হতে পারে না যদি শিকড় প্রজেক্টের অভ্যন্তরীণ শক্তি সঠিক থাকে।
একদিন, নাদিয়া একটি নতুন উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা শুরু করে—
“আমরা বিশ্বব্যাপী শিক্ষা ব্যবস্থায় আরও বেশি কার্যক্রম চালু করবো। বিশেষ করে সেই সকল এলাকার প্রতি যেখানে সুযোগের অভাব রয়েছে। আমাদের উদ্যোগ যেন শুধু বড় শহরগুলিতেই সীমাবদ্ধ না থাকে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়েও শিশুদের শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে।”
এটি ছিল শিকড় প্রজেক্টের নতুন ধাপ, যেখানে শুধু বড় শহর নয়, পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সমান শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা পৌঁছানোর পরিকল্পনা ছিল।
0 Post a Comment:
Post a Comment