গল্প: হতভাগা
পর্ব: ২০ (শেষ পর্ব)
শিরোনাম: ‘হতভাগা’ নয়, ‘জয়িনী’
লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ
ঢাকার কুর্মিটোলা মিলনায়তনে জমকালো এক আয়োজন।
জাতীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতি মেলা।
মঞ্চের মাঝখানে শোভা পাচ্ছে এক বিশাল ব্যানার—
“শিকড়: আত্মপরিচয়ের সংগ্রাম”
অতিথি, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, সংস্কৃতিজন—সবাই গুনছে সময়।
প্রধান বক্তা আজ—নেহা রহমান।
আরিজ এখন আফ্রিকায়, জাতিসংঘের অধীন ‘সাসটেইনেবল কালচার প্রজেক্ট’-এর মুখ।
নেহা স্টেজে উঠে বলে—
“যে মাটি আমাদের জন্ম দেয়, আমরা তাকে ভুলে যাই।
আর কেউ কেউ, সেই মাটিকে ভালোবেসে বুকে আগুন বয়ে বেড়ায়।
আমি এমন একজনকে দেখেছি—নাদিয়া রহমান।
আজ তার সন্তানের সাফল্য আমাদের সবার জয়।”
হলজুড়ে করতালি।
নাদিয়া চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান। কেউ একজন বলে—
“এই তো সেই মা, যাকে একদিন সমাজ ছুঁড়ে ফেলেছিল!”
রুবিনার মিথ্যাচার, ভিডিও এডিটিং এবং রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টার সব প্রমাণ বেরিয়ে আসে।
স্থানীয় এক সাংবাদিক প্রকাশ করে—
“যে নারী এক মাকে সমাজচ্যুত করতে চেয়েছিল, সে-ই আজ নিজের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।”
নাদিয়া কোথাও কোনো প্রতিশোধ নেয় না।
এক প্রেস বিবৃতিতে শুধু বলেন—
“ক্ষমা করতে পারা দুর্বলতা নয়। প্রতিশোধ না নিয়ে শান্ত থাকা মানেই আত্মিক শক্তি।”
আরিজ আফ্রিকা থেকে নিয়মিত মাকে চিঠি লিখে।
একটি চিঠিতে সে লেখে—
“মা, এখানে যখন কেউ নিজের শেকড়ের গল্প বলে, তখন আমি তোদের কথা বলি।
বলে দেই, আমি সেই ছেলেটা, যার মা একা হাতে একটি সমাজকে পরাজিত করেছিল।”
নাদিয়া সেই চিঠিগুলো যত্ন করে রাখেন।
একটি ছোট কাঠের বাক্সে—যেন স্মৃতির সৌধ।
একদিন সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষিত হয়—
‘জাতীয় নারী শক্তি সম্মাননা’
এবছর এই পুরস্কার পাচ্ছেন—নাদিয়া রহমান।
পুরস্কার গ্রহণের মুহূর্তে নাদিয়া বলে—
“একটা সময় আমি ছিলাম ‘হতভাগা’।
আজ এই পরিচয়ে দাঁড়ানো—আমার নয়, সমস্ত একা মায়ের জয়।
যে মা সন্তানের পাশে থাকে, সে মা জাতির আলোকবর্তিকা।”
এই মুহূর্তে উপস্থিত এক সাংবাদিক বলে ফেলেন—
“আজকের পর থেকে কেউ তাকে ‘হতভাগা’ বলবে না। সে এক ‘জয়িনী’ মা।”
এক বছরের মাথায় আরিজ দেশে ফেরে।
নেহা তাকে বিমানবন্দরে রিসিভ করে।
পাশে দাঁড়িয়ে নাদিয়া—শাড়িতে, চোখে জ্যোতি।
আরিজ মাকে দেখে বলে—
“তুমি কাঁদছো মা?”
নাদিয়া মাথা নাড়ে—
“না, আমি হাসছি। তুই ফিরে আসলি, এটাই তো আমার ভাগ্য।”
আরিজ মাকে জড়িয়ে ধরে।
পেছনে ক্যামেরা, সাংবাদিক, আলোকপাত।
কিন্তু এই মায়ের কাছে সবটাই ম্লান।
একজন মা, যাকে সমাজ একদিন ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল,
সেই মা-ই দাঁড়িয়ে আছেন সন্তানের হাত ধরে গর্বে মাথা উঁচু করে।
“হতভাগা” শব্দটা এখন কেবল একটা পুরনো খোলস, যার ভেতর থেকে জন্ম নিয়েছে এক নতুন আলোর নাম—
“জয়িনী”।
সমাপ্ত।
ধন্যবাদ, এই দীর্ঘযাত্রায় সঙ্গ দেওয়ার জন্য।
0 Post a Comment:
Post a Comment