গল্প: হতভাগা পর্ব: ১৯ লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ

 





গল্প: হতভাগা

পর্ব: ১৯
লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ



যখন শিকড় প্রজেক্ট আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে, যখন মনে হচ্ছিল ঝড় পেরিয়ে সূর্যের দেখা মিলেছে—ঠিক তখনই আবার ফিরে আসে এক পুরনো ছায়া।

রুবিনা, সেই প্রতিবেশী, যে একসময় নাদিয়াকে কলঙ্কিনী বলেছিল—সে ফিরে এসেছে, কিন্তু এবার ক্ষমা চেয়ে নয়।

রুবিনা এখন এক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।
তার অবস্থান, ক্ষমতা—সবকিছুই বেড়েছে।
কিন্তু মনের বিষাক্ততা কমেনি।

সে স্থানীয় মিডিয়াকে বলে—

“আমি একসময় সত্য বলেছিলাম, সবাই আমায় দোষ দিলো। এখন প্রমাণ করেছি, আমার সন্দেহ ঠিক ছিল। এমন পরিবার দেশের ভবিষ্যৎ নয়।”

নাদিয়া বিষয়টা হজম করতে পারেন না।
কিন্তু এবার আর চুপ থাকেন না।

তিনি সাংবাদিকদের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন—

“আপনারা যাদের কাদা ছুঁড়ে মারছেন, তাদের পেছনে পাহাড়ের মতো লড়াইয়ের গল্প থাকে। একা মায়ের সংগ্রামকে ছোট করে দেখতে গেলে, আপনি মানুষ নন।”



নেহা ও আরিজের সম্পর্কেও টানাপোড়েন শুরু হয়।
কারণ, নেহা জানতে পারে—এক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, “ফিউচার রুটস”, আরিজকে এক নতুন প্রকল্পের নেতৃত্বে ডাকছে, যার জন্য দুই বছর তাকে আফ্রিকায় থাকতে হবে

নেহা বলে—

“তুমি চলে গেলে, শিকড় কে সামলাবে? আমি কি প্রস্তুত?”

আরিজ বলে—

“তুমি পারবে। কারণ তুমি শুধু আমার ভালোবাসা নও, তুমি আমার জায়গায় দাঁড়ানোর যোগ্য।”

নেহা দ্বিধায় পড়ে যায়। ভালোবাসা একপাশে, দায়িত্ব অন্যপাশে।



ঠিক সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে একটি এডিট করা ভিডিও, যেখানে দেখা যাচ্ছে নাদিয়া নাকি এক সময় বিদেশি ডোনারদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে শর্তে রাজি হয়েছিল—“দেশের ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে বিকৃত করে তরুণদের পরিচালিত করবে”।

ভিডিওটি ভুয়া, তবে এত নিখুঁতভাবে বানানো যে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে।

জাতীয় তদন্ত সংস্থা হস্তক্ষেপ করে।
নাদিয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়।

আরিজ বিদেশ যাত্রা স্থগিত করে।



রেজা করিম সামনে আসে।
সে প্রমাণ দেয়, এই ষড়যন্ত্রের পেছনে রয়েছে এক বড় কর্পোরেট লবি, যারা ‘শিকড়’ প্রকল্পকে বন্ধ করতে চায়—কারণ এর প্রভাবে তরুণরা বিদেশি পণ্য, চিন্তা ও নির্ভরশীলতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে রেজা বলে—

“তারা ভয় পায়—এক মা আর তার সন্তান যদি শিকড় খুঁজে পায়, তাহলে তারা আর বিভ্রান্ত হবে না।”

এই বক্তব্য আবারও সমাজে আলোড়ন তোলে।



নেহা সবকিছু দেখে আরিজকে জড়িয়ে ধরে বলে—

“আমি ভেবেছিলাম দূরে গেলে সম্পর্ক হারিয়ে যাবে।
এখন বুঝলাম—এই সম্পর্ক যদি সত্য হয়, তবে দূরত্ব কোনো দেয়াল নয়, সেতু।”

সে সিদ্ধান্ত নেয়, শিকড়ের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার সে নিজে সামলাবে।
আরিজ আফ্রিকায় যাবে, বিশ্বমঞ্চে দেশের প্রতিনিধি হয়ে।



নাদিয়া তার ডায়েরির পাতায় লেখে—

“এই যুদ্ধ থামেনি, থামবেও না।
একদিন আমি ছিলাম 'হতভাগা', আজ আমার সন্তান 'আলোকধারা'।
এক মা যদি সমাজের মুখোমুখি দাঁড়ায়, তবে সে শুধুই মা নয়—সে এক জাতির প্রতিচ্ছবি।”



আরিজ প্লেনে ওঠার সময়, মায়ের কানে ফিসফিস করে বলে—

“মা, আমি ফিরে আসবো। নতুন আলো নিয়ে। ততদিন তুমি জ্বলে থাকো আমার শিখা হয়ে।”

নাদিয়া জানালায় দাঁড়িয়ে শুধু বলেন—

“আমার গর্ভের সন্তান, আমার অহংকার।”


চলবে...

0 Post a Comment:

Post a Comment