গল্প: হতভাগা পর্ব: ৯ লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ

 



গল্প: হতভাগা
পর্ব: ৯
শিকড়ের ডালপালা
লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ


১. এক নতুন ভোর

ঢাকার গুলশান এক্সিকিউটিভ কনফারেন্স হলে আজ ভিড় জমেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি, মিডিয়া, এবং এনজিও নেতাদের। মঞ্চে উঠছেন এক নারী—তার গায়ে সাদা সালোয়ার-কামিজ, মুখে দৃঢ়তা, চোখে আত্মবিশ্বাস।

নাদিয়া।

তিনিই “হতভাগা”র প্রতিষ্ঠাতা এবং “শিকড়” প্রজেক্টের মুখ।

তাঁর বক্তব্যে তিনি বলেন:

“আজ আমি এখানে এসেছি একজন মা হিসেবে, একজন কলঙ্কিনী হিসেবে নয়। আমি জানি কীভাবে সমাজ আমাদের মতো মানুষদের তিরস্কার করে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, শিকড় যত গভীর, গাছ তত দৃঢ় হয়।”

ঘরে তখন করতালির ঝড়।


২. ‘শিকড়’ প্রজেক্ট কী?

‘শিকড়’ প্রজেক্ট মূলত পথশিশু, অবৈধ জন্মপ্রাপ্ত শিশু, গুম হওয়া পিতামাতার সন্তান, এবং সমাজবঞ্চিত শিশুরা যাতে আত্মপরিচয় পায়, শিক্ষা পায়, আইনি সহায়তা পায়—সে লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়।

এখানে নাদিয়ার সন্তান আরিজ এই প্রজেক্টের মুখপাত্র হিসেবে শিশুদের অধিকার নিয়ে কথা বলে জাতিসংঘের সেমিনারে।

সে বলে—

“আমরা বাবা-মায়ের পরিচয়ে না, আমাদের স্বপ্নের পরিচয়ে বাঁচতে চাই।”

সারা হল দাঁড়িয়ে পড়ে।


৩. আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

জাতিসংঘের শিশু অধিকার ফোরাম (UNCRC) “শিকড়” প্রজেক্টকে South Asian Model Initiative হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

এরপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘Human Dignity Award’ এর জন্য “হতভাগা” মনোনীত হয়।

ফ্রান্সের বিখ্যাত মানবাধিকার কর্মী Élise Fournier বলেন—

“বাংলাদেশে নাদিয়া যা করেছেন, তা একাই এক বিপ্লব। আমরা তাঁর পাশে আছি।”

এমন সময়ই গল্পে আসে এক নতুন মোড়।


৪. নতুন প্রতিপক্ষ

একটি প্রভাবশালী স্থানীয় NGO—“নতুন দিগন্ত”, যারা দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি অনুদানে চলে আসছে, হঠাৎ নাদিয়ার উত্থানে ক্ষুব্ধ হয়।

তাদের পরিচালক শায়লা রহমান বলেন এক গোপন মিটিংয়ে—

“একটা মেয়ের অতীত যতই কলঙ্কে ভরা হোক, মিডিয়া তাকে মহান বানিয়ে ফেলছে। ওর প্রতিষ্ঠানের পেছনে যদি আমরা দুর্নীতির প্রমাণ পাই, তবে সব শেষ হয়ে যাবে।”

তারা তদন্ত শুরু করে, আর কিছু ঘুষখোর মিডিয়া ব্যবহার করে ‘হতভাগা’র কিছু কর্মীর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তোলে।


৫. আরেক মুখোমুখি যুদ্ধ

নাদিয়া দেখেন, আন্তর্জাতিক পুরস্কারের আগেই তার বিরুদ্ধে “স্বেচ্ছাচারিতা, অনুদানের অপব্যবহার, এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের” মামলা দায়ের হয়।

রায়হান বলেন—

“এটা সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তুমি তাদের জায়গা কাড়ছো, এখন তারা তোমার জায়গা নিতে চায়। কিন্তু তুমি হাল ছেড়ো না।”

নাদিয়া নির্ভয়ে মুখোমুখি হন আদালতের।

তার হয়ে আইনি সহায়তা দেয় এক ব্রিটিশ আইনজীবী David Moore, যিনি আগেই “শিকড়” প্রজেক্টে স্বেচ্ছাসেবক ছিলেন।


৬. সামাজিক প্রতিবাদের ঢেউ

সোশ্যাল মিডিয়ায় #আমার_শিকড় ট্রেন্ড হয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষ তাদের বাবা-মায়ের পরিচয়হীনতা, অবজ্ঞা, অথবা সমাজের কাছে অবমাননার গল্প শেয়ার করতে থাকে।

নাদিয়া বলেন:

“আমি কারও শত্রু না, আমি শুধু চেয়েছিলাম সন্তানদের সম্মান নিয়ে বড় করতে। যদি তাই অপরাধ হয়, আমি সেটাও মেনে নেব।”


৭. মুখোমুখি নাদিয়া ও শায়লা

একটি বিতর্কিত টকশোতে দুই সংগঠক—নাদিয়া ও শায়লা মুখোমুখি হন।

শায়লা বলেন—

“আপনি একজন অপরাধীর সন্তানকে সামনে রেখে আবেগের ব্যবসা করছেন।”

নাদিয়া জবাব দেন—

“আপনি হয়তো সিল্ক শাড়ি পরে সমাজসেবা করেন। আমি কলঙ্ক বুকে নিয়ে মানুষ গড়ি।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ সেই রাতেই ৫০ লাখ মানুষ দেখে। জনসমর্থন যায় নাদিয়ার দিকে।


৮. পুরস্কারের রাত

“হিউম্যান ডিগনিটি অ্যাওয়ার্ড” গ্রহণের জন্য জেনেভায় এক অভিজাত অনুষ্ঠানে নাদিয়া ও আরিজ উপস্থিত।

নাদিয়া বলেন—

“আমার পরিচয় আমি ‘হতভাগা’। কিন্তু এই পরিচয়েই আমি গর্বিত, কারণ তা শুধু আমার না, সমাজের হাজারো ‘অপরিচিত’ মুখের। আজ আমরা কথা বলছি, কাল তারা নিজের পরিচয়ে দাঁড়াবে।”


৯. শেষ দৃশ্য: শিকড় ছড়িয়ে পড়ছে

ঢাকায় ফিরে এসে নাদিয়া দেখেন, দেশের ১৪টি জেলায় ‘শিকড়’ প্রজেক্টের শাখা চালু হয়েছে।

একজন স্বেচ্ছাসেবী এসে বলে—

“আপার নাম শুনে তো গ্রাম থেকে এক বাচ্চা মেয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছে, বলে—আমি ‘হতভাগা’র স্কুলে পড়তে চাই।”

নাদিয়া চেয়ে থাকেন দূরের দিকে। তার চোখে জল।

রায়হান পাশে এসে দাঁড়ায়, বলে—

“তোমার অতীত তোমার ওজন ছিল। আজ সেটা তোমার ডানায় পরিণত হয়েছে।”


চলবে…


গল্প: হতভাগা
পর্ব: ৯
লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ



0 Post a Comment:

Post a Comment