গল্প: হতভাগা পর্ব: ১০ লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ






 গল্প: হতভাগা

পর্ব: ১০
লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ



ঢাকা শহরের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে শায়লা রহমান তার মুঠোফোনের স্ক্রীনে কয়েকটি ফাইল স্ক্যান করে। মুখে ক্ষণিকের হাসি, কিন্তু সেই হাসি এক ধরনের ক্ষোভ আর প্রতিশোধের। তিনি জানতেন, নাদিয়ার উত্থান তাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে, কিন্তু কিছু অর্জনের জন্য কিছু হারাতে হয়।

শায়লা ফোনে বললেন—

“আপনারা কি প্রস্তুত? ‘শিকড়’ প্রজেক্টের বিরুদ্ধে আমি যে অভিযোগ তুলেছি, তা বাস্তবায়িত হলে নাদিয়া শেষ হয়ে যাবে।”

তিনি তাঁর সাহায্যকারীকে নির্দেশ দিলেন, “এখনই মিডিয়াতে এই খবরটি ফাঁস করো। নাদিয়াকে একদম কোণঠাসা করতে হবে। এই পৃথিবীতে কেউ সহজে উঠে আসে না। তাকে যদি নষ্ট করতে চাই, তবে তার অতীতকে কাজে লাগাতে হবে।”



কনফারেন্স শেষে ঢাকা ফিরে এসে, নাদিয়া সেদিন রাতেই ফোনে শায়লার অভিযোগের বিষয়ে জানতে পারে। মিডিয়াতে একটি শিরোনাম ভাসতে থাকে—

“শিকড় প্রজেক্টের পেছনে অবৈধ অনুদান, নাদিয়া এক মাফিয়াদের অংশ?”

এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নাদিয়ার জীবনে এক নতুন ঝড় আসে। সংবাদপত্রে, টিভিতে, সোশ্যাল মিডিয়ায়, তার নামে উঠতে থাকে একের পর এক অভিযোগ। শুধু কটূক্তি নয়, তার প্রতি নেতিবাচক মনোভাবও তৈরি হতে থাকে। তার দলের কিছু সদস্যও সন্দেহ করতে শুরু করেন, অনেকেই তাঁকে সরাসরি প্রশ্ন করতে থাকেন—

“আপনি কী জানতেন এসব?”

নাদিয়া জানত, শায়লার এই চক্রান্ত শুধু তার নয়, শিকড় প্রজেক্টের প্রতিটি সদস্যের ওপর আঘাত। কিন্তু সে কখনো হাল ছাড়বে না। এবার তার বিরুদ্ধে একটা বড় লড়াই অপেক্ষা করছে।



সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি লাইভ সেশন শুরু করে নাদিয়া। তার চোখে দৃঢ়তা, কথায় নির্ভীকতা ছিল।

“আজ যে প্রশ্নগুলো ওঠানো হচ্ছে, আমি জানি আপনারা অনেকেই সেই প্রশ্নের উত্তর চান। আমি শুধু আপনাদের বলব, আমার ও আমার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আনা কোনো অভিযোগ যদি সত্য হয়, আমি নিজে নিজের বিরুদ্ধে মামলা করবো। কিন্তু যতটুকু জানি, ‘শিকড়’ প্রজেক্ট একটিই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে—এ পৃথিবীটাকে আরও সুন্দর করা।”

নাদিয়া কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন থামায়। তিনি জানতেন, এখন শুধু তার নিজস্ব সততা, কঠোর পরিশ্রম ও প্রমাণের ওপর ভরসা রাখতে হবে।



রায়হান ফিরে এসে নাদিয়াকে আশ্বস্ত করে। দুই জনেই জানতেন, শায়লার চক্রান্ত থামানোর একমাত্র উপায় হল সঠিক প্রমাণ বের করা। রায়হান ফোনে তার আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, বলে—

“আমরা শায়লার সব কর্মকাণ্ডের ওপর নজর রাখব। যারা আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ চাই। সময় লাগবে, কিন্তু আমরাও হাল ছাড়ব না।”

এমন কঠিন সময়ে রায়হান নাদিয়ার পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে তার প্রতি এক অদৃশ্য বন্ধন আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে।



“শিকড়” প্রজেক্টের সদস্যরা তাদের কাজ চালিয়ে যেতে শুরু করে, তবে এখন তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে এক নতুন তীব্রতা। প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি উদ্যোগ যেন আরও বেশি দৃষ্টির মধ্যে ছিল। স্কুলে নতুন শিশুদের ভর্তি, অঙ্গীকারের ভাষা—সবকিছুই প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও চালু রাখছিল নাদিয়া।

একদিন, প্রজেক্টের এক কর্মী—ফারহান—নাদিয়াকে জানায়, “ম্যাডাম, শায়লা রহমানের বিরুদ্ধে কয়েকটি প্রমাণ পেয়েছি। আপনি কি চান আমরা এগুলোর ওপর কাজ করি?”

নাদিয়া মাথা নিচু করে, কিছুক্ষণ ভাবল। তারপর বলল—

“হ্যাঁ, আমরা শয়তানের বিরুদ্ধে কিছু একটা করতে পারব। তবে আমাদের পথ সঠিক থাকতে হবে।”

এটি ছিল তার প্রথম সত্যিকার প্রতিশোধের মুহূর্ত, কিন্তু নাদিয়া জানত, এখনই তাকে সকল প্রমাণ পাবার চেষ্টা করতে হবে, যাতে পরিস্থিতি তার বিপক্ষে না চলে যায়।



এদিকে, আরিজ তার জীবনের এক বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। স্কুলের বন্ধুরা এবং সমাজের নানা পক্ষ থেকে, তার মা নাদিয়ার বিরুদ্ধে কথা শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু আরিজ জানত, মা কখনো কোনো অন্যায় করেননি।

সে একদিন মায়ের কাছে এসে বলল—

“মা, আমি তোমার পাশে আছি। তুমি সত্যি জানো, আমি জানি তুমি আমাদের জন্য সব করতে।”
“তবে, আমি আর তোমার সাথে থাকব, আজ থেকেই তোমার প্রজেক্টের বিষয়ে আরও বেশ কিছু দায়িত্ব নিতে চাই।”

আরিজের কথাগুলো নাদিয়াকে স্তম্ভিত করে দেয়। সে জানত, তার সন্তান আরও বড় হয়ে উঠছে। আরিজের সাহসিকতা তার পরিবারকে নতুন আশার আলো দেখায়।



এবার নাদিয়া এবং তার দলকে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে হয়। দেশি এবং আন্তর্জাতিক আইনি প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে তারা শায়লা রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করতে শুরু করে।

রায়হান বলল—

“এটা শুধু ‘শিকড়’ প্রজেক্টের লড়াই নয়, এটা সারা বাংলাদেশের সেই সব মানুষের লড়াই, যারা নিজেদের অধিকার চেয়ে প্রতিনিয়ত সমাজের রুখে দাঁড়িয়ে থাকে।”



শায়লা রহমানের বিরুদ্ধে সমস্ত প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়ে গেলে, সেই তথ্য সাংবাদিকদের সামনে পেশ করা হয়। মিডিয়ায় শ্বেতসন্ধ্যার আলোয় আসতে থাকে শায়লার সব অন্ধকার দিক।

নাদিয়া জানত, এই লড়াইয়ের জয়ী হতে হলে একে একে প্রতিটি ধাপ সফলভাবে অতিক্রম করতে হবে। কিন্তু সে আশাবাদী ছিল যে একদিন তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।


চলবে...
গল্প: হতভাগা
পর্ব: ১০
লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ



0 Post a Comment:

Post a Comment