গল্প: হতভাগা পর্ব: ২০ (শেষ পর্ব) শিরোনাম: ‘হতভাগা’ নয়, ‘জয়িনী’ লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ





 গল্প: হতভাগা

পর্ব: ২০ (শেষ পর্ব)
শিরোনাম: ‘হতভাগা’ নয়, ‘জয়িনী’
লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ



ঢাকার কুর্মিটোলা মিলনায়তনে জমকালো এক আয়োজন।
জাতীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতি মেলা
মঞ্চের মাঝখানে শোভা পাচ্ছে এক বিশাল ব্যানার—
“শিকড়: আত্মপরিচয়ের সংগ্রাম”

অতিথি, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, সংস্কৃতিজন—সবাই গুনছে সময়।
প্রধান বক্তা আজ—নেহা রহমান।
আরিজ এখন আফ্রিকায়, জাতিসংঘের অধীন ‘সাসটেইনেবল কালচার প্রজেক্ট’-এর মুখ।

নেহা স্টেজে উঠে বলে—

“যে মাটি আমাদের জন্ম দেয়, আমরা তাকে ভুলে যাই।
আর কেউ কেউ, সেই মাটিকে ভালোবেসে বুকে আগুন বয়ে বেড়ায়।
আমি এমন একজনকে দেখেছি—নাদিয়া রহমান।
আজ তার সন্তানের সাফল্য আমাদের সবার জয়।”

হলজুড়ে করতালি।
নাদিয়া চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান। কেউ একজন বলে—
“এই তো সেই মা, যাকে একদিন সমাজ ছুঁড়ে ফেলেছিল!”



রুবিনার মিথ্যাচার, ভিডিও এডিটিং এবং রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টার সব প্রমাণ বেরিয়ে আসে।

স্থানীয় এক সাংবাদিক প্রকাশ করে—

“যে নারী এক মাকে সমাজচ্যুত করতে চেয়েছিল, সে-ই আজ নিজের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।”

নাদিয়া কোথাও কোনো প্রতিশোধ নেয় না।
এক প্রেস বিবৃতিতে শুধু বলেন—

“ক্ষমা করতে পারা দুর্বলতা নয়। প্রতিশোধ না নিয়ে শান্ত থাকা মানেই আত্মিক শক্তি।”



আরিজ আফ্রিকা থেকে নিয়মিত মাকে চিঠি লিখে।
একটি চিঠিতে সে লেখে—

“মা, এখানে যখন কেউ নিজের শেকড়ের গল্প বলে, তখন আমি তোদের কথা বলি।
বলে দেই, আমি সেই ছেলেটা, যার মা একা হাতে একটি সমাজকে পরাজিত করেছিল।”

নাদিয়া সেই চিঠিগুলো যত্ন করে রাখেন।
একটি ছোট কাঠের বাক্সে—যেন স্মৃতির সৌধ।



একদিন সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষিত হয়—
‘জাতীয় নারী শক্তি সম্মাননা’

এবছর এই পুরস্কার পাচ্ছেন—নাদিয়া রহমান

পুরস্কার গ্রহণের মুহূর্তে নাদিয়া বলে—

“একটা সময় আমি ছিলাম ‘হতভাগা’।
আজ এই পরিচয়ে দাঁড়ানো—আমার নয়, সমস্ত একা মায়ের জয়।
যে মা সন্তানের পাশে থাকে, সে মা জাতির আলোকবর্তিকা।”

এই মুহূর্তে উপস্থিত এক সাংবাদিক বলে ফেলেন—

“আজকের পর থেকে কেউ তাকে ‘হতভাগা’ বলবে না। সে এক ‘জয়িনী’ মা।”



এক বছরের মাথায় আরিজ দেশে ফেরে।
নেহা তাকে বিমানবন্দরে রিসিভ করে।
পাশে দাঁড়িয়ে নাদিয়া—শাড়িতে, চোখে জ্যোতি।

আরিজ মাকে দেখে বলে—

“তুমি কাঁদছো মা?”

নাদিয়া মাথা নাড়ে—

“না, আমি হাসছি। তুই ফিরে আসলি, এটাই তো আমার ভাগ্য।”

আরিজ মাকে জড়িয়ে ধরে।

পেছনে ক্যামেরা, সাংবাদিক, আলোকপাত।
কিন্তু এই মায়ের কাছে সবটাই ম্লান।



একজন মা, যাকে সমাজ একদিন ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল,
সেই মা-ই দাঁড়িয়ে আছেন সন্তানের হাত ধরে গর্বে মাথা উঁচু করে

“হতভাগা” শব্দটা এখন কেবল একটা পুরনো খোলস, যার ভেতর থেকে জন্ম নিয়েছে এক নতুন আলোর নাম—
“জয়িনী”।


সমাপ্ত।

ধন্যবাদ, এই দীর্ঘযাত্রায় সঙ্গ দেওয়ার জন্য। 

গল্প: হতভাগা পর্ব: ১৯ লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ

 





গল্প: হতভাগা

পর্ব: ১৯
লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ



যখন শিকড় প্রজেক্ট আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে, যখন মনে হচ্ছিল ঝড় পেরিয়ে সূর্যের দেখা মিলেছে—ঠিক তখনই আবার ফিরে আসে এক পুরনো ছায়া।

রুবিনা, সেই প্রতিবেশী, যে একসময় নাদিয়াকে কলঙ্কিনী বলেছিল—সে ফিরে এসেছে, কিন্তু এবার ক্ষমা চেয়ে নয়।

রুবিনা এখন এক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।
তার অবস্থান, ক্ষমতা—সবকিছুই বেড়েছে।
কিন্তু মনের বিষাক্ততা কমেনি।

সে স্থানীয় মিডিয়াকে বলে—

“আমি একসময় সত্য বলেছিলাম, সবাই আমায় দোষ দিলো। এখন প্রমাণ করেছি, আমার সন্দেহ ঠিক ছিল। এমন পরিবার দেশের ভবিষ্যৎ নয়।”

নাদিয়া বিষয়টা হজম করতে পারেন না।
কিন্তু এবার আর চুপ থাকেন না।

তিনি সাংবাদিকদের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন—

“আপনারা যাদের কাদা ছুঁড়ে মারছেন, তাদের পেছনে পাহাড়ের মতো লড়াইয়ের গল্প থাকে। একা মায়ের সংগ্রামকে ছোট করে দেখতে গেলে, আপনি মানুষ নন।”



নেহা ও আরিজের সম্পর্কেও টানাপোড়েন শুরু হয়।
কারণ, নেহা জানতে পারে—এক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, “ফিউচার রুটস”, আরিজকে এক নতুন প্রকল্পের নেতৃত্বে ডাকছে, যার জন্য দুই বছর তাকে আফ্রিকায় থাকতে হবে

নেহা বলে—

“তুমি চলে গেলে, শিকড় কে সামলাবে? আমি কি প্রস্তুত?”

আরিজ বলে—

“তুমি পারবে। কারণ তুমি শুধু আমার ভালোবাসা নও, তুমি আমার জায়গায় দাঁড়ানোর যোগ্য।”

নেহা দ্বিধায় পড়ে যায়। ভালোবাসা একপাশে, দায়িত্ব অন্যপাশে।



ঠিক সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে একটি এডিট করা ভিডিও, যেখানে দেখা যাচ্ছে নাদিয়া নাকি এক সময় বিদেশি ডোনারদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে শর্তে রাজি হয়েছিল—“দেশের ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে বিকৃত করে তরুণদের পরিচালিত করবে”।

ভিডিওটি ভুয়া, তবে এত নিখুঁতভাবে বানানো যে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে।

জাতীয় তদন্ত সংস্থা হস্তক্ষেপ করে।
নাদিয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়।

আরিজ বিদেশ যাত্রা স্থগিত করে।



রেজা করিম সামনে আসে।
সে প্রমাণ দেয়, এই ষড়যন্ত্রের পেছনে রয়েছে এক বড় কর্পোরেট লবি, যারা ‘শিকড়’ প্রকল্পকে বন্ধ করতে চায়—কারণ এর প্রভাবে তরুণরা বিদেশি পণ্য, চিন্তা ও নির্ভরশীলতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে রেজা বলে—

“তারা ভয় পায়—এক মা আর তার সন্তান যদি শিকড় খুঁজে পায়, তাহলে তারা আর বিভ্রান্ত হবে না।”

এই বক্তব্য আবারও সমাজে আলোড়ন তোলে।



নেহা সবকিছু দেখে আরিজকে জড়িয়ে ধরে বলে—

“আমি ভেবেছিলাম দূরে গেলে সম্পর্ক হারিয়ে যাবে।
এখন বুঝলাম—এই সম্পর্ক যদি সত্য হয়, তবে দূরত্ব কোনো দেয়াল নয়, সেতু।”

সে সিদ্ধান্ত নেয়, শিকড়ের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার সে নিজে সামলাবে।
আরিজ আফ্রিকায় যাবে, বিশ্বমঞ্চে দেশের প্রতিনিধি হয়ে।



নাদিয়া তার ডায়েরির পাতায় লেখে—

“এই যুদ্ধ থামেনি, থামবেও না।
একদিন আমি ছিলাম 'হতভাগা', আজ আমার সন্তান 'আলোকধারা'।
এক মা যদি সমাজের মুখোমুখি দাঁড়ায়, তবে সে শুধুই মা নয়—সে এক জাতির প্রতিচ্ছবি।”



আরিজ প্লেনে ওঠার সময়, মায়ের কানে ফিসফিস করে বলে—

“মা, আমি ফিরে আসবো। নতুন আলো নিয়ে। ততদিন তুমি জ্বলে থাকো আমার শিখা হয়ে।”

নাদিয়া জানালায় দাঁড়িয়ে শুধু বলেন—

“আমার গর্ভের সন্তান, আমার অহংকার।”


চলবে...

গল্প: হতভাগা পর্ব: ১৮ লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ

 

গল্প: হতভাগা
পর্ব: ১৮
লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ

শিকড় প্রজেক্টের জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে, তখনই ছায়ার মতো নেমে আসে এক অজানা ষড়যন্ত্র।
সরকারি এক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন উঠে আসে—“শিকড় প্রজেক্ট বিদেশি অর্থায়নে দেশের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক প্রচারণা চালাচ্ছে”

একটানা দুই দিন দেশের বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেল, ইউটিউব চ্যানেল এবং পত্রিকা শিরোনাম করে:

“দেশবিরোধী ‘শিকড়’? তদন্তে গোয়েন্দারা!”

আরিজ হতবাক।
প্রতিটি ডকুমেন্ট স্বচ্ছ, প্রতিটি লেনদেন বৈধ।
তবু কিভাবে এই অভিযোগ?



নাদিয়া বুঝে ফেলে, এটা শুধু প্রজেক্টের বিরুদ্ধে নয়, বরং আরিজকে ব্যক্তিগতভাবে আঘাত করার চেষ্টা।

একদিন রাতে সে আরিজকে ডেকে বলে—

“এই যে তোমার জনপ্রিয়তা, এটা সবার সহ্য হয় না। দেশের মাটিতে বড় হতে গেলে, মাটির পোকাও কামড়ায়।”

আরিজ চুপচাপ শোনে।

“মা, আমি কিছু লুকাইনি। কিন্তু এরা এত ঘৃণা কেন করে?”

নাদিয়া হালকা হাসে—

“কারণ তুই ‘হতভাগা’র সন্তান। ভাগ্য তোর পেছনে দাঁড়ায়নি, তুই ভাগ্যকে সামনে এনেছিস।”



এদিকে এক সাংবাদিক ‘নাদিয়া রহমান’-এর অতীত খুঁজে বের করতে গিয়ে আবিষ্কার করে,
নাদিয়ার সন্তান আরিজ—তাকে জন্ম দিয়েছিলেন এক নিঃসঙ্গ মহিলা, কিন্তু কোনো স্বীকৃতি ছিল না সেই সময়।

গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে:

“নাদিয়ার সন্তান অবৈধ? কে আরিজের পিতা?”

শব্দগুলো কুরুচিকর, কাঁটার মতো বিঁধে যায় আরিজের গায়ে।
নাদিয়া চুপ করে থাকে।

তবে আরিজ চুপ করে না।

এক প্রেস কনফারেন্সে দাঁড়িয়ে সে বলে—

“আমার পরিচয় আমি। আমার জন্ম, আমার মা—সে আমার পৃথিবী। পিতার পরিচয় না থাকলেও, আমার রক্তে কলঙ্ক নেই। যদি সমাজ একা মাকে প্রশ্ন করে, তাহলে সমাজই কলঙ্কিত।”

তথ্য দিয়ে, প্রমাণ দিয়ে, তার সাহস দিয়ে—আরিজ জনমনে আসন গড়ে।

নেহা, যে এতদিন চুপ ছিল, সামনে আসে।
একটি টেলিভিশন টকশোতে বলে—

“আমি আরিজের সহধর্মিণী নই, কিন্তু সহযোদ্ধা।
শিকড় প্রজেক্ট কারো বিরুদ্ধে নয়। এটি আমাদের সংস্কৃতির আয়না, শেকড়ের অনুসন্ধান।
যে শিকড় বোঝে না, সে কখনো ডালপালা গজায় না।”

এই বক্তব্য ভাইরাল হয়।
সমর্থন আসতে থাকে দেশের প্রান্ত থেকে প্রান্তে।
শুধু তরুণ সমাজ নয়, প্রবীণরাও বুঝতে শুরু করে—শিকড় প্রকল্প আসলে একটি আত্ম-অনুসন্ধান।



এ সময় এক রহস্যময় মানুষ আসে নাদিয়ার সামনে।

নাম—রেজা করিম। বয়স ষাট পেরিয়েছে।

সে বলে—

“আমি ইউরোপ থেকে ফিরেছি, বহু বছর পর। আমি একজন গবেষক, এবং... আমি তোমার পুরোনো চেনা। মনে পড়ে?”

নাদিয়া থমকে যায়।

এই রেজা করিমই ছিল একসময় তার সহপাঠী। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রেম।
তিনিই একসময় তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন গোপনে, যখন সমাজ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।

রেজা বলেন—

“তোমার ছেলের কথা শুনে ফিরে এসেছি। এই সময় তোমার পাশে না দাঁড়ালে আমি মানুষ থাকব না।”



সবকিছু কাটিয়ে, একদিন একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হয়—শিকড় সম্মেলন ২০২৫
প্রধান অতিথি হিসেবে আসেন দেশের রাষ্ট্রপতি।

আরিজ বক্তব্য দেয়—

“আমি নাদিয়ার ছেলে, একজন ‘হতভাগা’ মায়ের সন্তান।
কিন্তু আমার মা-ই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য।
আজ যারা প্রশ্ন করেছে, আমি তাদের ক্ষমা করি। কারণ তারা জানে না, একা মায়েরা কতটা শক্ত।
এই প্রজেক্ট তাদের জন্য, যারা হারিয়ে যাওয়া পরিচয়ের খোঁজে মরিয়া।”

হলজুড়ে করতালি। নাদিয়ার চোখে জল।
রেজা করিম এক কোণায় দাঁড়িয়ে, নিরবে সম্মান জানায় অতীতের প্রেমকে।



প্রেম, পরিচয়, সমাজের যন্ত্রণা—সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে ‘হতভাগা’র গল্প দাঁড়ায় এক মহাকাব্যে।

তবে এখানেই শেষ নয়।

চলবে....

গল্প: হতভাগা পর্ব: ১৭ লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ

 

গল্প: হতভাগা
পর্ব: ১৭
লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ

নতুন এক অধ্যায় শুরু হয়েছে আরিজের জীবনে। এখন সে তরুণ উদ্যোক্তা, বিশ্বমঞ্চে স্বীকৃত নাম।
এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে সে মালয়েশিয়ায় যায়।

সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় এক বাঙালি বংশোদ্ভূত তরুণী—নেহা ইসলাম
নেহা জন্মসূত্রে মালয়েশিয়ান হলেও, বাংলা বোঝে, বলে এবং হৃদয়ে বয়ে চলে তার শিকড়ের টান।

নেহার চোখে-মুখে আত্মবিশ্বাস, কিন্তু কোথাও একটা চাপা বিষণ্ণতা।
কথা বলতে বলতে আরিজ টের পায়—এই মেয়েটা খুব স্বাভাবিক নয়। যেন কিছু লুকোচ্ছে।

এক সন্ধ্যায় কুয়ালালামপুরের এক কাফেতে নেহা বলে—

“তুমি জানো আরিজ, আমি একদিন খুব ভুল করেছিলাম। কারো উপর ভরসা করেছিলাম, সে ভেঙে দিয়েছিল। কিন্তু এখন, তোমাকে দেখে আবার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে।”

আরিজ চুপ থাকে। প্রথমবার, তার বুকের ভেতর একটা আলাদা অনুভূতি—মনে হয়, সে কারও দিকে একটু করে ঝুঁকছে।



আরিজ দেশে ফিরে আসে। কিন্তু বদলে গেছে। আগের মতো আর শিকড় প্রজেক্টে গভীর মনোযোগ দিতে পারছে না।

নাদিয়া তার এই পরিবর্তন লক্ষ্য করে।

“তোর কি মন খারাপ? না কি... মন অন্য কোথাও?”

আরিজ হেসে এড়িয়ে যায়।

কিন্তু মা তো! মায়ের চোখ ফাঁকি যায় না।

এক রাতে, সে আরিজের রুমে ঢুকে দেখতে পায়—ডায়রির পাতায় লেখা—

“নেহা, তুমি কোথায়? আমার একলা পৃথিবীটা আজ তোমায় খুঁজছে।”

নাদিয়া অবাক হয় না। তবে চিন্তিত হয়। কারণ সে জানে—প্রেম কখনো কখনো তৈরি করে বিভ্রান্তি।



নেহার ফোন আসে একদিন।

সে জানায়, তার পরিবার তাকে এক প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। সেই লোকটি নেহার বাবার ব্যাবসায়িক অংশীদার এবং খুবই ক্ষমতাবান।

“আমি পালিয়ে যেতে চাই, আরিজ। কিন্তু কোথায় যাবো?”

আরিজ এক মুহূর্ত চিন্তা না করেই বলে—

“বাংলাদেশে চলে এসো। আমি আছি, তুমি একা নও।”

নাদিয়া সব শুনে বলেন—

“ছেলেকে আমি বন্ধ করতে চাই না। তবে চাই, সে বোঝে তার পছন্দটাই যেন তার পথের ছায়া না হয়।”



নেহা বাংলাদেশে আসে। মিডিয়াতে গুঞ্জন ওঠে—“শিকড় প্রজেক্টের উত্তরসূরি প্রেমে মাতোয়ারা”

নাদিয়ার কিছু শুভানুধ্যায়ী শুরু করে ফিসফাস—“মা যেমন বিতর্কে জড়িয়েছিল, ছেলে কি সেই পথেই যাচ্ছে?”

একদিন এক রিপোর্টার সরাসরি নাদিয়াকে প্রশ্ন করে—

“আপনার ছেলে কি শিকড় প্রজেক্টকে ব্যক্তিগত প্রেমের প্ল্যাটফর্ম বানিয়ে ফেলছে?”

নাদিয়া কঠিন গলায় জবাব দেয়—

“প্রেম কখনো প্ল্যাটফর্ম হয় না। ওটা জীবনকে রঙ দেয়। তবে প্রেম যদি দায়িত্ব ভুলিয়ে দেয়, তখনই সেটা বিপদ।”

আরিজ সব শুনে একদিন মায়ের রুমে আসে। চুপচাপ বসে থাকে।

“মা, আমি কি ভুল করছি?”

নাদিয়া বলে—

“ভুল প্রেম নয় আরিজ, ভুল সময় আর ভুল অঙ্গীকার। তুমি জানো, তোমার হৃদয়ের থেকেও বড় দায়িত্ব তোমার কাঁধে আছে। তুমি যদি ওকে ভালোবাসো, তবে ওকে সেই দায়িত্বের অংশ করো, বোঝা নয়।”



নেহার হাতে একদিন একটা চিঠি আসে।
চিঠিটা আরিজ লিখেছে—

“নেহা, আমি চাই তোমার স্বাধীনতা থাকুক, কিন্তু আমার পাশে থেকে।
যদি তুমি নিজেকে আমার সঙ্গে শিকড়ের পথে জড়াতে চাও—তবে তুমি আসো।
আর যদি তুমি ভেবো, আমি তোমার উড়তে বাধা হবো—তবে আমার ভালোবাসায় উড়েই যেও।”

নেহা অনেকক্ষণ চুপ করে থাকে। চোখে জল।

তার উত্তর:

“আমি আসবো। আমি শুধু প্রেম নয়, দায়িত্ব নিয়েই তোমার পাশে থাকতে চাই। এবার থেকে আমার পরিচয়, শিকড়ের এক সহযাত্রী।”



শিকড় প্রজেক্টে এক নতুন বিভাগ খোলা হয়—“নারী উদ্যোক্তা প্ল্যাটফর্ম”
নেহা তার হেড।
আরিজ ও সে একসঙ্গে দায়িত্ব নেয়।

নাদিয়া দূর থেকে দেখে, তার ছেলেটা আজ পথ দেখাচ্ছে।

একদিন রাতে সে ডায়েরিতে লেখে—

“হতভাগা ছিলাম, আজ হয়তো তা-ই। কিন্তু ভাগ্য যদি এত বড় করে দেয় আমার ‘অভাগ্য’কে—তবে তা-ই আমার গর্ব।”


চলবে...

গল্প: হতভাগা পর্ব: ১৬ লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ

 

গল্প: হতভাগা
পর্ব: ১৬
লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ

শিকড় প্রজেক্ট আন্তর্জাতিক সফলতার শীর্ষে পৌঁছানোর পরেও নাদিয়ার মন আজ অস্থির।
আজ তার নিজের জীবনের ‘শিকড়’-এর কথা খুব মনে পড়ছে—তিন বছর আগে শাহিনুর বেগমের সেই থাপ্পড়, রায়হানের অন্ধ অবিশ্বাস, সমাজের থুতু ফেলা কথা—সবকিছু।

একদিন ভোরে সে গাড়ি নিয়ে বের হয়। উদ্দেশ্য—পুরোনো সেই বাড়ি, যেখানে একদিন সে ছিল ‘কলঙ্কিনী’।

ফিরে গিয়ে দেখে, সেই বাড়িটা অনেক পুরোনো হয়ে গেছে। দরজায় কড়া নাড়লে একজন বৃদ্ধা বের হন—

বয়সের ভারে নুয়ে পড়া সেই মহিলা চোখে চশমা দিয়ে দেখে, মুখে হাত দিয়ে বলে—

“নাদিয়া? তুই?”

নাদিয়া তার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়ায়। কয়েক সেকেন্ডের নীরবতা।

“তুই এখন অনেক বড় হয়েছিস... আমি জানতাম, একদিন তুই আসবি। আমি তোকে ভুল বুঝেছিলাম মা। বিশ্বাস কর, আমি প্রতি রাতে কান্না করে ঘুমাই…”

নাদিয়া এবার উঠে এসে ওনার হাত ধরে বলে—

“আপনি মা ছিলেন, মা আছেন, থাকবেন। আমি চাই—এই বয়সে আপনি শান্তিতে থাকুন।”

শাহিনুর বেগম কাঁদেন, নাদিয়াকে বুকে টেনে নেন।

একটা সম্পর্ক, যেটা সমাজ ভেঙে দিতে চেয়েছিল, এখন ফিরছে ভালোবাসায়।



এইদিকে, আরিজ যখন নিজস্ব স্টার্টআপ নিয়ে কাজ করছে—তখনই প্রযুক্তি খাতে কাজ করা এক প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থা তাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে।

তারা দাবি করে, RootLink অ্যাপ এর কিছু তথ্য ব্যবহার করে গোপনে ‘ডেটা মাইনিং’ করা হয়েছে, যার কারণে আন্তর্জাতিক গোপনীয়তা আইনে মামলা হতে পারে।

আরিজ হতবাক।

তার কাজ স্বচ্ছ। কিন্তু এই ষড়যন্ত্রে শিকড় প্রজেক্টের সুনামও বিপদের মুখে পড়ে।

নাদিয়া তখন নিজে এগিয়ে গিয়ে আরিজকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সামনে এক প্রেস কনফারেন্স করেন—

“একটি বীজ যত শক্তিও হোক, যদি তার উপর পচা মাটি ফেলা হয়, সে কেবল ধ্বংস হয়। আমরা চাই—এই বীজকে মাটি নয়, আলো দিক সমাজ।”

প্রেস কনফারেন্সে প্রযুক্তিবিদদের সমর্থন মেলে আরিজের পক্ষে। তদন্তে প্রমাণিত হয়, আরিজের অ্যাপ ১০০% স্বচ্ছ এবং কোনো তথ্য অপব্যবহার হয়নি।

ষড়যন্ত্র ভেঙে পড়ে।



তানহা, যিনি শুরু থেকে নাদিয়ার পাশে ছিল, এবার জীবনের একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়।
তার পরিবার চায় সে কানাডায় সেটল করুক। সেখানে একটি ভালো চাকরি, স্থায়ী নাগরিকত্ব—সব প্রস্তুত।

কিন্তু তানহা ভাবে—এই সমাজ, এই ‘শিকড়’ ছেড়ে কি সত্যিই যাওয়া যায়?

শেষমেশ সে নাদিয়াকে জানায়—

“তুই যদি বলিস, আমি থাকবো। আমি তোকে ফেলে যেতে চাই না।”

নাদিয়া হাসে।

“তুই যা। তোর ডানা আছে, তুই উড়। আমি জানি, তুই আবার ফিরবি। তুই গেলে তুই বড় হবি, আমরাও হবো।”

তানহার চোখে জল আসে। কিন্তু তাতে ভয় নেই—এই আলাদা হওয়াটা ত্যাগ নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য পথ খুলে দেওয়া।



একদিন গভীর রাতে একটি মেইল আসে।
এক আন্তর্জাতিক NGO, যারা শিকড় প্রজেক্টের মডেল কপি করে নিজের নামে প্রচার করছে।

তাদের মূল উদ্দেশ্য—শিকড় নামটি কিনে নেওয়া এবং বাণিজ্যিক ব্যবহার করা।

নাদিয়া সেই মেইল দেখে হেসে ফেলে।

“আমার স্বপ্নের নাম কিনে নিতে চায়? স্বপ্ন কি টাকায় বিক্রি হয়?”

নাদিয়া এবার সরাসরি জাতিসংঘ ও বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থার কাছে অভিযোগ করেন।

সাক্ষাৎকারে বলেন—

“আমরা কেবল ক্ষুধা নয়, আত্মার অভাব মেটাতে কাজ করি। ‘শিকড়’ কেবল প্রকল্প নয়—একটি মানুষের সম্মান ফিরে পাওয়ার গল্প।”

বিশ্বব্যাপী মানুষজন এই বক্তব্যে আবেগিত হয়।
#SaveShikor ট্রেন্ড করে।

অবশেষে ঐ NGO নিজেদের অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ায়।



এই পর্বের শেষ দিকে, নাদিয়া এক চিঠি পায়। পাঠিয়েছেন রায়হান। তাতে লেখা—

“তোমার ছেলেকে নিয়ে আমি গর্ব করি। আমি এখন বুঝি, এক সন্তানের পরিচয় তার রক্ত নয়, তার চেতনায়। আমি ওর জন্য কিছু করতে চাই, যদি পারো, আমায় একটা সুযোগ দিও।”

নাদিয়া চিঠিটা পড়ে থাকে। পাশে বসে থাকা আরিজ বলে—

“মা, আমি যদি কখনো বাবাকে চিনতে চাই, তুমি কি বাধা দিবে?”

নাদিয়া বলে না, কেবল মাথা নাড়ে।

সময় যদি সম্পর্ক ভেঙে দিতে পারে, সময়ই চাইলে তা জোড়া লাগাতে পারে।


চলবে…

গল্প: হতভাগা পর্ব: ১৫ লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ




 গল্প: হতভাগা

পর্ব: ১৫
লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ



নাদিয়া যখন ব্যস্ত শিকড় প্রজেক্ট নিয়ে আন্তর্জাতিক একটি সম্মেলনের প্রস্তুতিতে, ঠিক তখনই একদিন ডাকযোগে একটি বিশেষ আমন্ত্রণপত্র আসে। এটি ছিল ইউনেস্কো থেকে, প্যারিসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া “Global Roots & Humanity” সম্মেলনের জন্য। সেখানে সারা পৃথিবী থেকে বাছাই করা ৫টি মানবিক প্রকল্পকে সম্মাননা দেওয়া হবে।

শিকড় প্রজেক্ট তার মধ্যে একটি।

এই সংবাদ শুনে পুরো টিম উৎফুল্ল হয়ে উঠে, কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় ছিল—এই সম্মেলনের বিচারকদের একজন হচ্ছেন সেই ব্যক্তি, যিনি একসময় শায়লার সাথে আন্তর্জাতিক কর্পোরেট গ্রুপে কাজ করতেন, এবং শায়লার প্রভাব থাকায় নাদিয়ার প্রজেক্টকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সময়ের আবর্তে সেই ব্যক্তিও এখন মানবিকতার পথে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন।

নাদিয়া অনুভব করল, সময়ই মানুষের সবচেয়ে বড় বিচারক।



আরিজ তার নতুন অ্যাপ্লিকেশন “RootLink” তৈরি করে ফেলেছে, যেটি দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলের মানুষদের শিকড় প্রজেক্টের সাথে সরাসরি যুক্ত হতে সাহায্য করে। এই অ্যাপে একদিকে যেমন উন্নয়ন প্রকল্পের খবর জানা যায়, তেমনি মানুষ চাইলে নিজ নিজ এলাকার চাহিদাও জানাতে পারে।

ইউনেস্কোর সম্মেলনে আরিজের আবিষ্কার বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়। বিভিন্ন দেশের প্রযুক্তিবিদ ও সমাজকর্মীরা তার কাজ দেখে বিস্মিত হয়।

সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে নাদিয়া বলে—

“মানবিক উন্নয়ন কেবল অর্থনৈতিক বা অবকাঠামোগত পরিবর্তনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি মানুষকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার বিষয়। শিকড় প্রজেক্ট একটি পথ মাত্র—যেখানে আমরা সবাই একে অপরের জন্য কাজ করি।”

তার বক্তব্যে হলজুড়ে দাঁড়িয়ে তালি পড়ে।



প্যারিসে থাকাকালীন, এক রাতে হোটেল লবিতে নাদিয়ার সামনে এসে দাঁড়ায় একজন চেনা মুখ—রায়হান

তিন বছর পর।
নিরবতা।
দীর্ঘক্ষণ কেউ কিছু বলেনা।
অবশেষে রায়হান বলল—

“তোমার জয় দেখে গর্ব হচ্ছে, নাদিয়া। অথচ… আমি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমিই একদিন তোমায় অপমান করে চলে গিয়েছিলাম।”

নাদিয়া চোখ নামিয়ে বলল—

“বিশ্বাস করো, তোমার প্রতি আমার কোনো রাগ নেই। কেবল একটাই প্রশ্ন রেখেছিলাম বারবার নিজের কাছে—‘আমি কি সত্যিই এতটা অযোগ্য ছিলাম যে, কেউ না শুনেই আমাকে কলঙ্কিনী বলবে?’”

রায়হান মাথা নিচু করে। তার চোখে অনুশোচনা।

“আমি এখন বুঝি… আমরা সমাজের ভাষায় বিচার করতে গিয়ে অনেক সময় ভালোবাসাকেও ভুলে যাই।”

এই মুহূর্তে নাদিয়া জানে, ক্ষমা করা শক্তি। কিন্তু সে কোনো সম্পর্ক ফিরিয়ে নিতে চায় না। সে এবার তার ‘অস্তিত্ব’ নিয়ে দাঁড়াতে শিখেছে।

ঢাকায় ফেরার পর খবর আসে—শায়লা রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক তদন্ত শুরু হয়েছে। তার দেশ ছাড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। মিডিয়া শায়লার পতনকে শিরোনামে তুলে ধরে।

আর এই সময়েই শিকড় প্রজেক্ট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথেও চুক্তি করে। যার ফলে উন্নয়নমূলক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

একদিন রাতে সংবাদে শায়লার মুখটা দেখে নাদিয়া চুপচাপ বসে থাকে। তার চোখে করুণা।

তানহা পাশে এসে বলে—

“তুমি যদি তখন তার পথে হাটতে, আজ হয়তো তিনিও তোমার মত হতে পারতেন। কিন্তু তিনি হারিয়ে গেছেন প্রতিশোধ আর অহংকারে।”

নাদিয়া জানে, প্রতিশোধ নয়—প্রেম, ক্ষমা, আর দায়বদ্ধতাই মানুষকে সত্যিকারের বিজয় এনে দেয়।



শিকড় প্রজেক্ট এবার শিশুদের জন্য বিশেষ প্রোগ্রাম চালু করে—“জন্মাধিকার” নামে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে পথশিশু, অনাথ, কিংবা অবহেলিত শিশুদের সুশিক্ষা ও পিতৃত্ব-মাতৃত্বের অধিকার নিশ্চিত করা হয়।

নাদিয়ার সন্তান, আরিজ, সেই কার্যক্রমের প্রতীক হয়ে ওঠে।

একদিন এক সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞেস করলো—

“তুমি একদিন এই প্রকল্পের জন্য পরিচিত হবে কি মা নাদিয়ার সন্তান হিসেবে? নাকি নিজের কাজের জন্য?”

আরিজ হাসলো—

“আমি গর্বিত যে মা নাদিয়া আমার মা। কিন্তু আমি চাই, আমার কাজ আমাকে আলাদা পরিচয় দিক। যেমন মা চেয়েছিলেন, আমি যেন নিজের পথ নিজে তৈরি করি।”



এই পর্বের শেষ দিকে নাদিয়ার হাতে আসে একটি চিঠি। এটি এসেছে আফ্রিকার একটি ছোট গ্রাম থেকে, যেখানে শিকড় প্রজেক্ট সম্প্রতি একটি স্কুল স্থাপন করেছে।

চিঠির মধ্যে লেখা:

“আমরা জানতাম না পৃথিবীতে কেউ আমাদের কথা ভাবে। আপনি সেই প্রথম ব্যক্তি, যিনি আমাদের নাম দিয়েছেন—‘মানুষ’ হিসেবে। আমাদের শিশুদের হাতে বই, মুখে হাসি আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন আপনি দিয়েছেন। আপনি আমাদের ‘মা নাদিয়া’।

নাদিয়ার চোখে জল আসে।

এই নামটাই ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় পরিচয়—
মা নাদিয়া।


চলবে...



গল্প: হতভাগা পর্ব: ১৪ লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ






 গল্প: হতভাগা

পর্ব: ১৪
লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ



শায়লা রহমানের শেষ চক্রান্তটি ছিল একটি বড় পরিকল্পনা, যেখানে তার মূল লক্ষ্য ছিল নাদিয়ার শিকড় প্রজেক্টকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া। তিনি জানতেন, নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং আর্থিক শক্তির মাধ্যমে সে কিছুটা সফল হলেও, শিকড় প্রজেক্টের প্রতি বিশ্ববাসীর সহানুভূতির জন্য তার প্রতিক্রিয়া কেবল তীব্র হতে পারে। তাই, এবার শায়লা এবং তার গোপন জোটের সদস্যরা পরিকল্পনা করেছিল, নাদিয়া ও তার প্রজেক্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানের একটি কেলেঙ্কারি তৈরি করা হবে।

শায়লা একটি বিদেশি সংবাদ সংস্থার মাধ্যমে কিছু ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, যাতে মনে হয় শিকড় প্রজেক্ট কিছু অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। কিন্তু কিছুদিন পর, শায়লা বুঝতে পারে যে তার পরিকল্পনা তেমন কার্যকরী হয়নি। কারণ শিকড় প্রজেক্টের সাথে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে এটি ছিল একটি ভালো এবং স্বচ্ছ উদ্যোগ, যা স্বীকৃত ছিল পুরো পৃথিবীজুড়ে।

এবার শায়লা চুপচাপ নিজের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করে। তবে তাকে দ্রুত বুঝতে হয় যে, তার ষড়যন্ত্র যে একেবারে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে, তাতে তার একান্ত প্রতিপক্ষ—নাদিয়া—অবশ্যই জয়ী হতে চলেছে।



শিকড় প্রজেক্ট আন্তর্জাতিক মঞ্চে দ্রুত শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। এটি শুধু একটি উদ্যোগ ছিল না, বরং একটি আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। নাদিয়ার নেতৃত্বে, শিকড় প্রজেক্ট এখন প্রায় প্রতিটি দেশে কার্যক্রম চালাচ্ছিল। নাদিয়া জানত, শায়লা যেকোনো সময় ফের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে পারে, কিন্তু তার বিশ্বাস ছিল জনগণের কাছে শিকড় প্রজেক্টের ভালো কাজগুলি পৌঁছালে শায়লা সফল হতে পারবে না।

একদিন, নাদিয়া তার দলের সদস্যদের নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বলল—

“আমরা যদি নিজেদের বিশ্বাস ও সততার ওপর দাঁড়িয়ে থাকি, তাহলে আমাদের শিকড় প্রজেক্ট কখনোই ব্যর্থ হবে না। শায়লা বা যে কোনো বিরোধী দল আমাদের এই পথ থেকে সরাতে পারবে না। আমাদের কাছে একটাই লক্ষ্য—মানুষের কল্যাণ। আর এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।”

তার এই বক্তব্যে দলের সদস্যরা উৎসাহিত হয়ে উঠল। সবাই জানত, তাদের কাজ শুধু সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা নয়, বরং একটি বৃহত্তর মানবিক দায়বদ্ধতা পূরণ করা। তাই তারা নিজের দায়িত্বে ও দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ চালিয়ে যেতে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল।



শায়লার ষড়যন্ত্র শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যাওয়ার পর, তার জীবনে এক ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে। তার রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক খ্যাতি ধ্বংস হয়ে যায়। দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অনেকের মতে, শায়লা এখন হারিয়ে গেছে—একটি পদক্ষেপের পর, আর কোনো স্থান তার জন্য নেই।

একদিন, শায়লা তার কার্যালয়ে বসে চুপচাপ চিন্তা করছিল। তার কপালে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট ছিল। বারবার তার মস্তিষ্কে ঘুরছিল, “এটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াল? আমি কি ভুল পথে চলে গেছি?”। এভাবে একসময় তার আত্মবিশ্বাস চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল।

তার একমাত্র ভরসা ছিল তার পুরনো বন্ধু এবং রাজনৈতিক সমর্থকরা, যারা এবার তাকে একাই ফেলে দিয়েছে। শায়লা জানত, তার অতীতের অনৈতিক কর্মকাণ্ড এখন আর ঢেকে রাখা সম্ভব নয়।



যদিও শায়লা নিজের ষড়যন্ত্রে পরাজিত হয়েছিল, তবে নাদিয়া জানত, এখনো অনেক কিছু বাকি আছে। শিকড় প্রজেক্টের পথ সহজ নয়। একদিকে শায়লার পরাজয়ের পর, বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক জগৎ থেকে নতুন প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। কিছু গোপন সংস্থা, যারা শায়লার সমর্থক ছিল, তারা এখন শিকড় প্রজেক্টের বিপক্ষে উঠিয়ে নিয়ে আসছে নানা অভিযোগ।

নাদিয়া তার দলের সদস্যদের সাথে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করছিল। একদিন, একটি বৈঠকে সে বলল—

“আমরা যখন এত দূর এসেছি, তখন এই নতুন প্রতিবন্ধকতাগুলো আমাদের পিছিয়ে রাখতে পারবে না। আমাদের দৃষ্টি লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের কাজ এবং উদ্দেশ্যই সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র।”

তার এই উক্তি দলের সকল সদস্যদের এক নতুন উদ্যমের সাথে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করল। তারা জানত, যেকোনো প্রতিবন্ধকতাকেই তারা কাটিয়ে উঠতে পারবে।



আরিজ, যে শিকড় প্রজেক্টের প্রতি তার মায়ের মতোই নিবেদিত ছিল, এবার আরও এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে শুরু করে। একদিন, সে নাদিয়ার কাছে এসে বলল—

“মা, আমি শিকড় প্রজেক্টের জন্য এক নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে চাই। আমাদের সামাজিক কর্মসূচির সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি সংযুক্ত করলে, বিশ্বের সকল শ্রেণির মানুষ সহজেই আমাদের কাজ জানতে পারবে।”

নাদিয়া তার ছেলের কথায় মুগ্ধ হয়ে বলল—

“তুমি যদি সত্যিই এই কাজটি করে দেখাতে পারো, তবে আমাদের কাজের প্রতি মানুষের আগ্রহ আরও বাড়বে। কিন্তু মনে রেখো, এটি শুধু প্রযুক্তির প্রয়োগ নয়, এটি মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার একটি উপায়।”

আরিজ জানত, তার কাজের মাধ্যমে শিকড় প্রজেক্ট আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। সে তার মায়ের কাছ থেকে প্রেরণা নিয়ে, এই উদ্যোগে নিজেকে আরও নিবেদিত করে তুলল।



এভাবে, শিকড় প্রজেক্ট একের পর এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে থাকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে, যেখানে মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং মৌলিক অধিকার পেতে সমস্যায় পড়তে হয়, সেখানে শিকড় প্রজেক্টের কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে থাকে।

নাদিয়া একদিন বলল—

“আমরা এখন যে অবস্থানে আছি, সেটি কোনো সহজ পথ ছিল না। প্রতিটি বাধা, প্রতিটি সমস্যা আমাদের শক্তিশালী করে তুলেছে। এবং আমরা প্রতিটি মানুষের জীবন পরিবর্তন করতে সক্ষম হচ্ছি।”

শিকড় প্রজেক্টের সাফল্য, নাদিয়া এবং তার দলের অবিচল প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ, আন্তর্জাতিক মহলে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছিল। যদিও শায়লা এবং তার সমর্থকরা একের পর এক চক্রান্ত করে গিয়েছিল, তবে নাদিয়া তার সততা এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে সবার কাছে প্রমাণ করে দিয়েছে, সঠিক পথে চললে প্রতিটি বাধাই অতিক্রম করা সম্ভব।


চলবে.....

গল্প: হতভাগা পর্ব: ১৩ লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ

 




গল্প: হতভাগা

পর্ব: ১৩
লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ



শায়লা রহমান, যিনি এক সময় একটি বড় প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন, এখন দুনিয়া থেকে একপ্রকার নির্বাসিত। তার রাজনৈতিক ও আর্থিক খ্যাতি প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। কিন্তু শায়লার কাছে এখনও কিছু শেষ ত্রুটি ছিল—তিনি জানতেন, তার ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক সম্পর্কগুলি তাকে রক্ষা করতে পারে। তার বিরুদ্ধে মামলাও চলছিল, তবে শায়লা নিজের ক্ষমতার শেষ নিঃশেষ করতে চায়নি। এমন একটি সময়ে, সে একটি নতুন ষড়যন্ত্রের ছক কষে।

একটি গোপন মিটিংয়ের মাধ্যমে শায়লা বিভিন্ন ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, এবং কিছু মিডিয়া ব্যক্তিত্বকে একত্রিত করে। তার পরিকল্পনা ছিল, নাদিয়া ও তার শিকড় প্রজেক্টের কর্মকাণ্ডকে সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাসী সমর্থক হিসেবে তুলে ধরা। এর মাধ্যমে তার প্রজেক্টের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে এবং নাদিয়াকে তার পথ থেকে সরিয়ে ফেলা যাবে।

"আমরা যদি তার কাজের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে পারি, তাহলে তার প্রজেক্টটি পৃথিবীজুড়ে অচল হয়ে যাবে। আমাদের উপস্থাপন করা তথ্য ও প্রমাণ যদি মিথ্যা না হয়, তবে তাকে ঘিরে সৃষ্টি হবে এক বড় বিপদ," শায়লা সভায় বলছিল।

এবার শায়লা আরও একবার তার শত্রু নাদিয়ার বিরুদ্ধে চক্রান্তে মগ্ন ছিল। তবে সে জানত, এবার আগের মতো সহজ হবে না।



নাদিয়া জানত, শায়লা হারলেও তার ষড়যন্ত্র থামবে না। নাদিয়া নিজেকে প্রস্তুত রাখছিল এমন এক পরিস্থিতির জন্য, যেখানে তাকে শুধু নিজের প্রজেক্ট নয়, পুরো পৃথিবীকে রক্ষা করতে হবে। শায়লার পরিকল্পনার খবর পাওয়ার পর, নাদিয়া এবং তার দল দ্রুত একটি নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি করল।

একদিন, নাদিয়া তার দলের সাথে মিটিংয়ে বলল—

“শায়লা আবার কিছু করতে চাইছে। কিন্তু আমরা জানি, তার ষড়যন্ত্রের শেষ কোথায়? আমাদের যদি জনগণের বিশ্বাস অর্জন করতে হয়, তাহলে আমাদের আরও বেশি সতর্ক এবং সংগঠিত হতে হবে। শিকড় প্রজেক্ট শুধুমাত্র একটি প্রজেক্ট নয়, এটি এখন একটি আন্দোলন। আমরা যা করছি, তার মূল উদ্দেশ্য হল মানুষের কল্যাণ। এটি কখনোই কোনো ধরনের সন্ত্রাস বা সহিংসতার সাথে যুক্ত হতে পারে না।”

নাদিয়া বিশ্বাস করত, সত্যের শক্তি শেষ পর্যন্ত জিতবে। সে জানত, শায়লা যতই চেষ্টা করুক, জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্ব এবং সঠিক পথের প্রতি তাদের অবিচল বিশ্বাসই তাদের জয়ী করবে।



শায়লা যখন তার ষড়যন্ত্র চালাতে থাকে, তখন তার প্রজেক্টের বিরুদ্ধে মিডিয়া এবং জনমত তৈরি করার প্রচেষ্টা শুরু হয়। প্রথম দিকে, তার কিছু চক্রান্ত কিছুটা সফলও হয়েছিল। কিছু মিডিয়া রিপোর্ট এবং সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে শিকড় প্রজেক্টের বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ উঠতে শুরু করে। তবে শায়লার পরিকল্পনা যেমনই শক্তিশালী হোক, নাদিয়া ও তার দলের কঠোর পরিশ্রম এবং সততার কারণে, খুব দ্রুত এর প্রতিক্রিয়া পাওয়া শুরু হয়।

একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম শিকড় প্রজেক্টের সঠিক কাজের প্রমাণ পেয়ে, তাদের পাশে দাঁড়িয়ে যায়। মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়—

“শিকড় প্রজেক্টের কাজ বিশ্বের এক অনন্য সামাজিক উদ্যোগ। যাদের উদ্দেশ্য মানুষের উন্নতি, শিক্ষা এবং কল্যাণ, তারা কখনোই সন্ত্রাস বা সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না।”

এতে শায়লা আরও একবার হার মানতে বাধ্য হয়। তার যেসব চক্রান্ত এবং অপপ্রচার চালানো হয়েছিল, সেগুলি জনমনে অবিশ্বাস সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়।



নাদিয়া জানত, শায়লা পুরোপুরি হারেনি, তবে তিনি যে জনগণের সমর্থন পেয়েছেন, সেটি ছিল তার বড় শক্তি। শায়লার বিপদ থেকে একধাপ এগিয়ে, নাদিয়া এবং তার দল এক নতুন পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তারা ঠিক করেছিল, এবার পুরো পৃথিবীতে শিকড় প্রজেক্টের কাজ আরও দৃঢ়ভাবে তুলে ধরা হবে।

নাদিয়া তার পরিকল্পনাটি দলের সদস্যদের জানাল—

“আমাদের কাজ এখন শুধু আমাদের দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমরা আরও বড় প্রজেক্ট চালু করবো—বিশ্বব্যাপী শিক্ষার ক্ষেত্রেও আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করবো। আমাদের লক্ষ্য বিশ্বজুড়ে এমন একটি উদ্যোগ গড়ে তোলা, যেখানে প্রতিটি শিশুর জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে।”

তার এই বক্তব্য শিকড় প্রজেক্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি নতুন দিশা দেখিয়ে দিল। নাদিয়া জানত, এটাই তার প্রজেক্টের মূল উদ্দেশ্য। তিনি এই পৃথিবীকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং ন্যায্য সমাজ হিসেবে গড়ে তুলতে চাইতেন।



শায়লা, যিনি কখনোই নিজের আত্মসম্মান হারাতে চায়নি, এবার একেবারে শেষ চক্রান্তের দিকে এগোচ্ছিল। তার পরিকল্পনা ছিল, সে কিছু শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক নেতাদের একত্রিত করে একটি নতুন গোপন জোট তৈরি করবে। এর মাধ্যমে তিনি নাদিয়ার প্রজেক্টের মূল স্তম্ভের বিরুদ্ধে কাজ করবেন।

তবে, শায়লার শেষ চক্রান্ত ছিল তার নিজের শেষ ধাপ। এই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তিনি ভাবতেন, আবার একবার নাদিয়াকে পরাজিত করতে পারবেন, কিন্তু তার অজানা ছিল, নাদিয়া যে শক্তির সঙ্গে তার দলের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে, তা কখনোই পরাজিত হবে না।

এদিকে, আরিজ শিকড় প্রজেক্টের জন্য একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠছিল। তার মেধা এবং কাজের প্রতি আগ্রহ দেখে, নাদিয়া তাকে আরও বেশি দায়িত্ব দিয়েছিল। একদিন, আরিজ তার মায়ের কাছে এসে বলল—

“মা, আমি কিছু একটা করতে চাই। শিকড় প্রজেক্টের জন্য আরও ভালো কিছু করতে চাই। আমি জানি, এই মুহূর্তে তুমি অনেক বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, কিন্তু আমি তোমার পাশে আছি। তোমার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমি সাহায্য করতে প্রস্তুত।”

নাদিয়া তার ছেলের কথা শুনে চুপচাপ কিছুক্ষণ ভেবেছিল। তারপর সে বলেছিল—

“আরিজ, তুমি যে এতো বড় কিছু করতে চাও, তা দেখে আমি গর্বিত। তবে, মনে রেখো, জীবনটা এক পথ নয়, বহু পথের সমষ্টি। তুমি যদি সত্যিকারের পরিবর্তন চাও, তোমাকে সৎভাবে কাজ করতে হবে, আর মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।”

আরিজের চোখে এক নতুন আগ্রহ দেখা দিয়েছিল। সে জানত, তার মা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তারও সেভাবে এগিয়ে যেতে হবে।


চলবে...
গল্প: হতভাগা
পর্ব: ১৩
লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ



গল্প: হতভাগা পর্ব: ১২ লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ

 




গল্প: হতভাগা

পর্ব: ১২
লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ



নাদিয়া এবং তার দল যখন শিকড় প্রজেক্টের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করতে শুরু করে, তখন পুরো পৃথিবী তাদের কর্মকাণ্ডের দিকে নজর দিতে শুরু করে। নানা দেশের বিভিন্ন সরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকে। বিশ্বের উন্নয়নমূলক সংস্থাগুলির কাছ থেকে নানা ধরনের সহযোগিতা প্রস্তাব আসতে থাকে।

একদিন, নাদিয়া তার দলের সদস্যদের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে বসেছিল। তিনি জানতেন, শিকড় প্রজেক্টের জন্য এই সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে তাদের কাজের প্রতি বিশ্বব্যাপী আগ্রহ, অন্যদিকে শায়লা রহমানের ষড়যন্ত্রের স্মৃতি, সব কিছুই তাকে এক নতুন বাস্তবতার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।

“আমরা শুধু আমাদের দেশেই সফল হতে চাই না,” নাদিয়া বলেছিল, “আমাদের লক্ষ্য হল, বিশ্বব্যাপী সমাজে সমান অধিকার, শিক্ষা এবং উন্নতি নিশ্চিত করা। এই প্রজেক্টকে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিতে হবে, যা শুধু সমাজের এক অংশ নয়, বরং সব শ্রেণির মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করবে।”

তার কথায় দৃঢ়তা ছিল, এবং সে জানত যে, এই লড়াইটি তার জীবনকেই শুধু বদলাবে না, পুরো বিশ্বের ভবিষ্যতও পরিবর্তন করতে পারে।



আরিজ, এখন বড় হয়ে উঠছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল যে, সে কিছু একটা করতে চায়—এমন কিছু, যা তার মা নাদিয়ার কাজকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যেতে পারে। সে আজকাল মায়ের সঙ্গে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করত। একদিন, মায়ের কাছে এসে সে বলল—

“মা, আমি জানি তুমি সবসময় আমাদের জন্য কাজ করেছো, কিন্তু আমি চাই, আমি তোমার সাহায্যে বিশ্বের জন্য কিছু করতে পারি। আমি শিকড় প্রজেক্টে একজন সক্রিয় সদস্য হতে চাই।”

নাদিয়া তার চোখে প্রশংসার ছাপ নিয়ে তাকিয়ে বলল—

“তুমি জানো, এটা শুধুমাত্র আমাদের দেশের মানুষদের জন্য নয়, বরং গোটা বিশ্বের জন্য। আর যদি তুমি সত্যিই সাহায্য করতে চাও, তাহলে তোমার প্রতিটি সিদ্ধান্তে বিশ্বমানের মানদণ্ড অনুসরণ করতে হবে। এটা শুধু আমাদের কাজের জন্য নয়, এটা মানবতার জন্য।”

আরিজ জানত, তার সিদ্ধান্ত শুধু তার জীবনে নয়, সমগ্র পৃথিবীকে প্রভাবিত করবে।



যদিও শায়লা রহমান একাধিক অভিযোগের মুখোমুখি হয়ে নিজের ক্ষমতা হারিয়েছে, তবে সে এখনও পর্দার আড়ালে নানা চক্রান্ত করে যাচ্ছিল। তার প্রচেষ্টা ছিল নাদিয়ার শিকড় প্রজেক্টের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিকূলতা সৃষ্টি করা। একদিকে তার অপরাধের বিচার চলছে, অন্যদিকে শায়লা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে নানা গোপন রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরি করতে থাকে।

একদিন, শায়লা এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করছিল। তার উদ্দেশ্য ছিল, শিকড় প্রজেক্টের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো এবং সেই সঙ্গে নাদিয়ার প্রজেক্টের উৎসগুলিতে বাধা সৃষ্টি করা। কিন্তু এই সমস্ত ষড়যন্ত্রের মাঝেও, শায়লা জানত, সে খুব দ্রুতই সামনে আসবে এবং তার গোপন কৌশলগুলো প্রকাশ পাবে। তবে, সে নিশ্চিত ছিল যে, যতই সে অন্ধকারে কাজ করুক না কেন, তার আগ্রাসী পদক্ষেপ শেষ পর্যন্ত নাদিয়ার কাছেই ফিরবে।



শিকড় প্রজেক্টের কাজ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার পর, নাদিয়া একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আমন্ত্রণ পায়। সেখানে বিশ্বের উন্নয়নমূলক সংস্থাগুলির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল, বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।

নাদিয়া সম্মেলনে যোগ দেয় এবং সেখানে তার বক্তব্য রাখে—

“শিকড় প্রজেক্ট শুধু একটি উদ্যোগ নয়, এটি পৃথিবীজুড়ে এমন এক আন্দোলন যেখানে প্রতিটি মানুষ নিজে থেকেই নিজেকে উন্নত করতে পারবে। এটি একটি সামাজিক সমাধান যা সকলকে সমান অধিকার ও সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে সমাজের উন্নতি নিশ্চিত করবে।”

তার বক্তব্য শোনার পর, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তার ওপর প্রশংসার ঝড় তোলে। বিভিন্ন দেশের উন্নয়ন সংস্থাগুলি শিকড় প্রজেক্টের সাথে একযোগে কাজ করতে আগ্রহী হয় এবং নতুন অর্থায়ন প্রস্তাব গ্রহণ করতে শুরু করে।



শায়লা, যিনি আশা করেছিলেন নাদিয়ার প্রজেক্টটি দমন করা যাবে, এখন বুঝতে পারে যে, নাদিয়া এবং তার দল সত্যিই বৃহত্তর উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে। শায়লার অসফলতার সাথে সাথে তার ব্যবসায়িক সম্পর্কও হুমকির মুখে পড়ে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থায়নও কমতে শুরু করে।

অন্তর্দ্বন্দ্বে থাকা শায়লা একদিন একটি গোপন মিটিংয়ে নিজের পরিকল্পনা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়—

“যতদূর সম্ভব, আমাকে নাদিয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করতে হবে। কিন্তু এবার আমাকে কিছু নতুন চিন্তা করতে হবে। হয়তো আমি শুধু তার বিরুদ্ধে কাজ করলে হবে না, তার প্রজেক্টের অভ্যন্তরীণ কাজেও ভাঙন ধরাতে হবে।”

শায়লা জানত, তার প্রতিটি পদক্ষেপ নাদিয়ার জন্য আরও বড় এক বিপদ নিয়ে আসবে। তবে শায়লার জানা ছিল না যে, নাদিয়া যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো শক্তি অর্জন করেছে।



এরই মধ্যে, নাদিয়া নিজের প্রজেক্টের নতুন দিক পরিকল্পনা করে চলছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন, শায়লার চক্রান্ত কোনো বাধা হতে পারে না যদি শিকড় প্রজেক্টের অভ্যন্তরীণ শক্তি সঠিক থাকে।

একদিন, নাদিয়া একটি নতুন উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা শুরু করে—

“আমরা বিশ্বব্যাপী শিক্ষা ব্যবস্থায় আরও বেশি কার্যক্রম চালু করবো। বিশেষ করে সেই সকল এলাকার প্রতি যেখানে সুযোগের অভাব রয়েছে। আমাদের উদ্যোগ যেন শুধু বড় শহরগুলিতেই সীমাবদ্ধ না থাকে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়েও শিশুদের শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে।”

এটি ছিল শিকড় প্রজেক্টের নতুন ধাপ, যেখানে শুধু বড় শহর নয়, পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সমান শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা পৌঁছানোর পরিকল্পনা ছিল।




গল্প: হতভাগা পর্ব: ১১ লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ




 গল্প: হতভাগা

পর্ব: ১১
লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ


 

এক সপ্তাহের মধ্যেই শায়লা রহমানের বিরুদ্ধে আইনগত তদন্ত সম্পন্ন হয়ে যায়। সংবাদপত্রে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় একে একে প্রকাশ হতে থাকে তার অপকর্মের প্রমাণ। শায়লা নিজের ভুল স্বীকার করতে না চাইলেও, তথ্যপ্রমাণে ফাঁস হয়ে যায় তার মিথ্যাচার।

নাদিয়া তার দলের সদস্যদের সাথে মিটিংয়ে বসে। সে জানত, শায়লার পতন শুধু তার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নয়, বরং দেশের মানুষের জন্য এক বড় জয়। এবার তারা পুরো পৃথিবীকে দেখাতে পারবে যে, শিকড় প্রকল্প সত্যিকারের উন্নতি ও সচেতনতায় কাজ করছে।

"এটা আমাদের বিজয় নয়, এটা আমাদের সেই সমস্ত মানুষের বিজয় যারা প্রতিনিয়ত তাদের অধিকার ও সম্মান রক্ষার জন্য লড়াই করছেন," নাদিয়া বলেছিল, তার মুখে দৃঢ়তার ছাপ।

এদিকে, শায়লা যখন পিছু হটে, তখন তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। একে একে তার সমস্ত অপরাধের বিচার শুরু হয়, এবং সে জানত, তার ক্ষমতার দিন শেষ।



নাদিয়া জানত, এই লড়াইয়ের শেষে হয়তো কিছুটা শান্তি পাবে, তবে তার মনে এক অদৃশ্য ক্ষত রয়ে গেছে। শায়লার মতো মানুষের প্রতারণা সহজেই ভোলা যায় না। প্রজেক্টের কাজেও কিছু সময়ের জন্য অবাঞ্ছিত বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল।

রাতের অন্ধকারে একদিন, নাদিয়া একা বসে ছিল। তার চোখে অশ্রু ছিল না, কিন্তু তার মন কিছুটা ভারী হয়ে উঠেছিল। এতদিন সে শুধু প্রকল্পের জন্য কাজ করেছে, কিন্তু আজ তাকে ভাবতে হয়েছিল তার নিজের জীবন, নিজের সন্তানের ভবিষ্যত সম্পর্কে। সবার চোখে তাকে যে অপরাধী হিসেবে দেখা হচ্ছিল, সেই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার অনুভূতি তার জন্য একদিকে আশীর্বাদ, অন্যদিকে একটি নতুন দ্বন্দ্ব।

"এই মুহূর্তে আমি জানি না, আগামীকাল আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে," নাদিয়া মনে মনে ভাবছিল। "কিন্তু আমি জানি, আমি যেখানেই যাব, সঠিক পথেই যাব।"



একদিন, আরিজ তার মায়ের কাছে গিয়ে এক অদ্ভুত প্রশ্ন করেছিল—

“মা, তুমি তো সবকিছু জানো, আমাদের জীবন এত লড়াইয়ের পরও কেন আমি অন্যদের মতো সাধারণ হতে পারলাম না? কেন আমার জীবনটা এত কঠিন?”

নাদিয়া স্তম্ভিত হয়ে এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। তারপর ধীরে ধীরে আরিজের দিকে তাকিয়ে বলল—

"আরিজ, জীবন কখনো সহজ ছিল না। আর সহজ কিছু হঠাৎ আসে না। তুমি যেটা দেখেছো, সেটা শুধুমাত্র পরিশ্রম, বিশ্বাস, এবং সঠিক পথের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। তুমি যদি মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে চাও, তুমি যদি অন্যদের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পেতে চাও, তোমাকে কখনোই হাল ছাড়তে হবে না।"

আরিজ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। তার চোখে যেন এক নতুন আশা তৈরি হয়েছিল। সে জানত, তার মা নাদিয়া তাকে সঠিক পথ দেখাবে।



শায়লা রহমান যখন তার দুর্দশা বুঝতে পারে, তখন তার মধ্যে এক অদ্ভুত ভয় কাজ করতে থাকে। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ এবং তার অপকর্মের প্রকাশিত তথ্য তাকে একেবারে কোণঠাসা করে দেয়। একদিকে আদালতের চাপ, অন্যদিকে সমাজের তীব্র নিন্দা, শায়লা বুঝতে পারে যে তার সব কিছু এখন শেষ।

কিন্তু সে হাল ছাড়ে না। শায়লা জানত, তার শেষ সুযোগ হল, সে যদি নাদিয়ার সম্মান নিয়ে কিছু গড়তে পারে, তবেই তার কিছুটা প্রতিশোধ পাওয়া যাবে। কিন্তু তার উদ্দেশ্য কেমন হবে? শায়লা কি নাদিয়াকে শেষ পর্যন্ত আঘাত করতে পারবে? নাকি সব কিছু হারিয়ে ফেলে তাকে আরেকটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে?



এদিকে, নাদিয়া ও তার প্রজেক্টের দল শিকড় প্রজেক্টের বিষয়ে আরো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করতে শুরু করেছিল। এরই মধ্যে তাদের প্রতি সম্মান এবং বিশ্বব্যাপী সমর্থনও বেড়েছিল। নাদিয়া মিটিংয়ে একদিন বলেছিল—

"আমরা শুধু একটি সমাজ পরিবর্তন করতে চাই না, আমরা চাই পৃথিবীজুড়ে সমাজে একটা শক্তিশালী নৈতিক পরিবর্তন আসুক।"

অন্যদিকে, শায়লার অভ্যন্তরীণ চক্রান্তের জাল আরও জটিল হয়ে যাচ্ছিল। তবে তার প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল একেবারে ভিন্ন। সে আসলে চেষ্টা করছিল সব কিছু নতুনভাবে গুছিয়ে নেওয়ার।



নাদিয়ার মনোভাব সেদিন থেকে একেবারে পরিবর্তিত হয়। শায়লার বিরুদ্ধে মামলা চালানো, সমস্ত ঘরবাড়ি পরিবর্তন করা, এইসব তাকে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিতে থাকে। শায়লা যখন তীব্র আঘাত দেয়, তখন নাদিয়া নিজের শক্তি অনুভব করে। নিজের পেশাদারিত্ব এবং নৈতিক অবস্থা ধরে রেখে, সে বুঝতে পারে, আসল শক্তি হচ্ছে বিশ্বাস।

এটা ছিল তার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত—যেখানে সে নিজের সঠিক পথের দিকে এগিয়ে চলে, এবং এর মাধ্যমে পৃথিবীকে দেখিয়ে দেয় যে, এক টুকরো আশা দিয়েও মানুষের জীবন পরিবর্তন করা সম্ভব।



এই মুহূর্তে নাদিয়া বুঝতে পারে, তার স্বপ্ন কেবল তার নয়, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ যাদের জীবন সংকটমুক্ত এবং সমান অধিকারী হতে পারে, তাদের। শিকড় প্রজেক্টের পরবর্তী ধাপ ছিল একটি বৃহত্তর আন্তর্জাতিক উদ্যোগের দিকে এগিয়ে যাওয়া।

নাদিয়া জানত, এই লড়াইয়ের পরবর্তী পর্যায় আরও কঠিন হবে, তবে সে কখনো হাল ছাড়বে না। একদিন তার প্রজেক্ট পুরো পৃথিবীকে পরিবর্তন করবে। সে দৃঢ়ভাবে জানত, তার সন্তান আরিজ এবং তার প্রজেক্ট একদিন সমাজে একটি উদাহরণ হয়ে উঠবে।

চলবে......